শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্কাইলাইন টাওয়ারের সাতাশতম তলায় অরণ্য চৌধুরীর অফিস। বিশাল কাচের জানালা দিয়ে শহরের অপরূপ দৃশ্য ভেসে উঠছে। দূরে আলোকিত গগনচুম্বী ভবনগুলো যেন রাতের আকাশে তারার মতো জ্বলছে। অফিসের ভেতরে চারদিকে বিলাসিতা আর ক্ষমতার ছোঁয়া। আধুনিকতা আর বিলাসিতার ছায়ায় ডুবে থাকা এই অফিসের মালিক অরণ্য চৌধুরী — শহরের উচ্চবিত্ত সমাজের এক পরিচিত নাম। তার নাম উচ্চারণ করলেই বাতাসে হালকা কম্পন ওঠে।
একদিকে নিজে শহরের অন্যতম ব্যবসায়ী, যাঁর হাত ধরে রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি—সব সেক্টর বন্দি। অন্যদিকে, বাবা আজাদ চৌধুরী, পরিচিত রাজনীতিবিদ, যিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান। বাবার ছায়ায় বেড়ে ওঠা অরন্য চৌধুরী যেন এক বিষাক্ত রোদ—আলোকিত হলেও তাকে ছোঁয়া যায় না, আর ছুঁতে গেলেই পুড়ে যাওয়ার ভয় হয়। যার উপস্থিতি বুক কাঁপিয়ে দেয়, কথা বলার আগেই শ্বাস রুদ্ধ করে তোলে আশপাশের মানুষকে। তার সামনে জড়োসরো হয়ে বসে আছে একজন—নাম সিমরান বিনতে কামাল। গায়ে সাধারণ সুতি শাড়ি, চোখে একরাশ কৌতূহল আর উৎকণ্ঠা হাতে একটি পুরনো ব্যাগ যা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। যেন নিজেকে সামলানোর শেষ চেষ্টা করছে৷ সিমরানের চোখে মুখে দ্বিধা স্পষ্ট।
টেবিলের ওপর কালো রঙের কফির মগ, সারি সারি ফাইল, আর ল্যাপটপের স্ক্রিনে ওঠানামা করছে শেয়ার মার্কেটের গ্রাফ তবে অরন্যের দৃষ্টি আটকে আছে সিমরানের দিকে যেন তার তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি সিমরানের পা থেকে মাথা অবদি বিশ্লেষণ করছে। সিমরানের অবস্থা দেখে অরন্য চৌধুরী মুখে কথা ফুটল,
—“কি ব্যাপার,মিস সিমরান কিছু বলছেন না কেন? এভাবে চুপচাপ বসে থাকার জন্য এখানে আসেন নি নিশ্চয়ই।
নিস্তব্ধতা ভেঙে এবার সিমরানের কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠল।
—“আ আপনি জানেন, মিস্টার চৌধুরী, আমি এখানে কেন এসেছি।”
সিমরানের কণ্ঠে দৃঢ়তা আছে, যদিও তার হাতের কাঁপুনি লুকানো যাচ্ছে না।অরণ্য একটু হাসল, তবে সেই হাসিতে কোন উষ্ণতা নেই হাসিটা বরফের মতো ঠান্ডা,
—“আমি অনেক কিছুই জানি, মিস সিমরান । কিন্তু আপনি কী চান, সেটা জানা সবচেয়ে বেশি জরুরী। আপনি কি চাইছেন পরিষ্কার করে বলুন।
—‘আ আ আমি আসলে…
—“দেখুন মিস,আমার হাতে এত সময় নেই,যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমার কাছে প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।”
অরন্যের কথায় সিমরানের চোখে একটা অসহায় আকুতি ফুটে উঠল। সে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“আপনি আমার পরিবারের একজন হয়েও এমন একটা প্রস্তাব কী করে দিচ্ছেন?
সিমরানের কথায় অরন্য হেসে উঠল। তার তাছিল্য দেখে সিমরান বলল,
–“প্লিজ ভাইয়া,আমাকে সাহায্য করুন। আমার বাবাকে বাঁচান। আমি আপনার সব টাকা ফিরিয়ে দেব।”
অরণ্য এতক্ষন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিল এবার সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, হাত দুটো পকেটে ঢুকিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। শহরের আলো-আঁধারির দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। সে পিছন ফিরে তাকাল, চোখে একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
—“পরিবারের একজন? গত পনেরো বছর যার সঙ্গে দেখা হয়নি, কথা হয়নি, সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি সেই ব্যাক্তি আপনার কাজিন হয় কীভাবে?আমাকে একটু বুঝাবেন, মিস সিমরান?
—“আপনি আমার খালামনির ছেলে এটা কি আপনি অস্বীকার করতে পারবেন?যোগাযোগ না থাকলেই রক্তের সম্পর্ক বদলে যায়?
—“নাহ! বদলায় না। বদলায় না বলেই, আমি আপনাকে টাকা দিতে রাজি হয়েছি। তানাহলে এই শহরে কি সুন্দরীর অভাব? আমি বেছে বেছে আপনাকেই কেন টাকা অফার করব?আপনার সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি দেশের প্রথম সারির মডেলরাও অরন্য চৌধুরীর কাছে পাত্তা পায় না। আপনার সাথে আমার পুরোনো সম্পর্ক না থাকলে,আপনি অরন্য চৌধুরীর সাথে বিছানায় যাওয়ার অফার পাওয়া তো দূরের ব্যাপার, তার সাথে কথা বলারও সুযোগ পেতেন না।
—“কিন্তু আমি মডেল কিংবা খারাপ মেয়ে নই।
—“দেখুন, মিস সিমরান, আমি বেশি কথা বলতে পছন্দ করি না। আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি থাকলে রুমের দরজা বন্ধ করুন। আর রাজি না হলে, দরজা খোলা আছে, সোজা বেরিয়ে যান। অযথা কথা বলার সময় আমার কাছে নেই।”
অরণ্যের কথা সিমরানের বুকে ছুরির মতো বিঁধল। চোখের কোণে জল জমে উঠল। তার বাবার কথা মনে পড়তেই বুক ফেটে কান্না আসছে। বাবা এখন হাসপাতালে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে সে এখানে এসেছে, অথচ নিজের সম্মানের বিনিময়ে সেই টাকা নিতে হবে, ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠল।
সিমরান মাথা নিচু করে আছে । তার হাত কাঁপছে। সে ভীরু চোখে দরজার দিকে তাকাল। খোলা দরজার ওপাশে এক মুক্ত রাস্তা, যেখানে তার সম্মান অটুট থাকবে, কিন্তু তার বাবার জীবনের নিশ্চয়তা থাকবে না। আরেকদিকে, দরজা বন্ধ করার মানে নিজেকে বিকিয়ে দেওয়া।
সিমরান ফিসফিস করে নিজেই নিজেকে বলল,
—“আমার হাতে আর কোনো উপায় নেই,কিন্তু নিজের সম্মানের চেয়ে মূল্যবান আর কি হতে পারে?আমার স্কুল শিক্ষক বাবা, যিনি সারাজীবন নিজের আর্দশ লালন করে মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন, তিনি যদি কখনো জানতে পারেন তার মেয়ে নিজের সম্মানের বিনিময়ে টাকা নিয়েছে তিনি কী মেনে নিতে পারবেন? কিন্তু এত কম সময়ে এতগুলো টাকা কিভাবে যোগাড় করব?যে করেই হোক কিছু একটা উপায় বের করতে হবে।
সিমরানে চোখের জল মেঝেতে ঝরে পড়ছে। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, পা দুটো যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে আছে। অরণ্য তাকে দেখছে,কিন্তু তার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই।
সিমরান দরজার দিকে এগোল। তার হাত দরজার হাতলে উঠল। ঘরে একটা অসহ্য নীরবতা ছড়িয়ে পড়ল। সিমরানের চোখের জল থামছে না। তার হাত দরজার হাতলে থরথর করে কাঁপছে। সিমরান চলে যাচ্ছে দেখে অরন্য শক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
—“ভাবুন মিস সিমরান,ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন, সময় এবং সুযোগ কারো জন্য অপেক্ষা করে না।আপনি এখন চলে গেলে বাবাকে বাঁচানোর শেষ সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে কারণ এর পরে আপনি ফিরে এলেও আমার প্রস্তাব অটুট থাকবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। অরন্য চৌধুরী একবার যে জায়গা থেকে সরে আসে সেই জায়গায় দ্বিতীয় বার পা রাখে না। আরেকটা কথা বাবা মারা গেলে, আমাকে দোষারোপ করতে আসবেন না কারন, আমি আপনাকে ফিরিয়ে দেইনি আপনি সেচ্চায় ফিরে যাচ্ছেন”
অরন্যের কথায় সিমরানের ভিতরটা ধ্বক করে উঠল।পা দুটি আটকে গেল। সে বেরিয়ে যেতে পারল না। মনের ভিতর কোথাও একটা নিশব্দ যুদ্ধ শুরু হয়েছে। শেষমেশ মনের যুদ্ধে হার মেনে সিমরান ধীরে ধীরে দরজাটা বন্ধ করে দিল। ঘরের নীরবতা আরও ভারী হয়ে উঠল, শুধু সিমরানের ফুঁপানির শব্দ ভেসে আসছে। সে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলল,
— “আ… আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি।
সিমরানের কথায় অরন্যের মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল,
—“ভালো সিদ্ধান্ত।
সিমরানের কাঁপনি আরও তীব্র আকার ধারন করল। হাত পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে কন্ঠও যেন কাঁপছে।
—“দ….দরজা বন্ধ করতে বললেন? মানে কি, এখনই সব করতে হবে?”
তার কণ্ঠে একটা অসহায় আকুতি, যেন সে এখনও একটা পথ খুঁজছে এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার। অরণ্য আবার নিজের চেয়ারে ফিরে এসে হেলান দিয়ে বসল। তার ঠোঁটে সেই চেনা ঠান্ডা হাসি, সে যেন দাবার চালে জিতে গিয়েছে। সে হেসে উঠল, টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা তুলে সিমরানের দিকে এগিয়ে ধরে বলল,
—“নাহ! করতে হবে না। সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় এবং পরিবেশ আছে এখন আমার মুড নেই।ভয় পাবেন না বসুন, পানি খান।
সিমরান অবিশ্বাসের চোখে অরন্যের দিকে তাকিয়ে রইল,
—“কি হল? আমাকে কি আপনার এসিস্ট্যান্ট মনে হচ্ছে, কতক্ষন পানি এগিয়ে রাখব? আসুন বলছি।
অরন্যের ধমকে সিমরান এগিয়ে এসে পানির গ্লাসটা হাতে নিল।অরণ্য তার ডেস্কের ওপর থেকে একটা কাগজের ফাইল তুলে নিল, তার মধ্যে একটি চুক্তিপত্র। চুক্তি পত্র টা বের করে সিমরানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
—“মিস সিমরান আপনাকে এখন কিছু করতে হবে না ঠিকি,তবে আগামী ছয় মাস আপনাকে আমার রক্ষিতা হয়ে থাকতে হবে। এই ছয় মাস আপনাকে আমার বাড়িতে থাকতে হবে এবং আমার চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে হবে। এই যে এগ্রিমেন্ট, সাইন করুন।”
সিমরান সবে পানিটা মুখে দিয়েছিলো অরন্যের কথায় পানি খাওয়া আর হলনা। বিষম খেয়ে পানিটা উগ্রে দিল।সিমরানের অবস্থা দেখে অরন্য চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করল।সিমরান তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে বলে উঠল,
—“ছ ছ ছয় মাস?
—“আপনার কত টাকা যেন দরকার?
—“ছয় লক্ষ।
—“নিজেকে কি বিশ্ব সুন্দরী ভাবেন?যে এক রাতের জন্য ৬ লক্ষ টাকা দাবি করছেন? বাজারে দাঁড়িয়ে দেখুন আপনার মূল্য হাজারের ঘর পার হবে না।
অরন্যার কথায় রাগে,দু:খে,অপমানে সিমরানের মরে যেতে ইচ্ছা করছে। সে মাথা নিচু করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল।
অরণ্য কাগজটা সিমরানের দিকে এগিয়ে দিল, সিমরানের চোখ কাগজের ওপর আটকে গেল। তার হাত কাঁপছে, মনে হচ্ছে সে এখনই ভেঙে পড়বে। কাগজে লেখা শব্দগুলো যেন তার সামনে একটা কালো পর্দা টেনে দিচ্ছে। সে ফিসফিস করে বলল,
—“আমার বাবাকে বাঁচানোর জন্য… আমি সব করতে রাজি।”
—“আগে ভালো করে শর্তগুলো পড়ুন । প্রথম শর্ত আমার সকল প্রকার চাওয়া পাওয়া আপনাকে পূরণ করতে হবে,শুধু যে শারীরিক চাহিদা মিটাবেন তা নয় এর বাইরেও আমার কিছু চাওয়ার থাকতে পারে। ২য় শর্ত আমার প্রতিটি আদেশ বিনাবাক্য পালন করতে হবে।৩য় শর্ত আমার অনুমতি ছাড়া আপনি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না। ৩য় শর্ত একসাথে থাকতে গেলে ঝগড়া মনমালিন্য হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু কোন কারনে আপনি আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতে পারবেন না । যদি কিছু বলার থাকে নিচু স্বরে বুঝিয়ে বলতে হবে আর শেষ এবং সবচেয়ে বড় শর্ত আপনি যেহেতু নিজের ইচ্ছায় একটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়াতে যাচ্ছেন এই সম্পর্কের সমস্ত দায়িত্ব আপনার। আমি এই সম্পর্কের কোন দায়িত্ব নিব না। এই ছয়মাসের মধ্যে আপনি যদি এই শর্তের বাইরে কিছু করেন তাহলে আপনাকে, আমার সম্পূর্ন টাকা ফিরত দিতে হবে।
অরন্যের কোন কথা সিমরানে কানে কথায় ঢুকছে না। সে আসলে নিজের মনকে বোঝানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
—“আমি উনার বাসায় গিয়ে খালামণিকে সব বলব উনি নিশ্চয়ই নিজের ছেলেকে এত জঘন্য একটা সম্পর্কে জড়াতে দিবেন না।
অরণ্য বলা শেষ করে সিমরানের দিকে তাকাল তার চোখে একটা অদ্ভুত দীপ্তি খেলা করছে।
—“সাইন করুন।
সিমরান কথা বাড়াল না কাঁপা হাতে কলমটা তুলে নিল। তার চোখের জল কাগজের ওপর ঝরে পড়ল, কিন্তু সে দাঁতে দাঁত চেপে সই করে দিল।অরণ্যের কণ্ঠে সন্তুষ্টির সুর বেজে উঠল, —“কংগ্রাচুলেশনস মিস সিমরান আজ থেকে আগামি ছয়মাস আপনার সকল দায়িত্ব আমার আর আমাকে খুশি রাখার দায়িত্ব আপনার। আজ রাতেই আপনি আমার বাড়িতে চলে আসবেন। গাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
সিমরান মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ল। তার মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে কি সত্যিই তার সম্মান বিকিয়ে দিল? নাকি এটা তার বাবার জীবন বাঁচানোর জন্য একটা ত্যাগ? সিমরানের হাতে সই করা চুক্তিপত্র এখন অরণ্যের ডেস্কের ওপর। তার চোখের জল শুকিয়ে গেছে, কিন্তু মুখে একটা শূন্যতা ছড়িয়ে আছে। অরণ্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, তার চোখে সেই চেনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। সে শান্ত কণ্ঠে বলল,
“—নিশ্চিন্তে বাসায় যান। শহরের সবচেয়ে নামকরা হাসপাতালে আপনার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। দরকার হলে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। চিন্তা করবেন না এই ছয় মাসে আপনার যা যা প্রয়োজন হবে, সব কিছুর দায়িত্ব আমার। আর আমার শারীরিক চাহিদা মিটানোর দায়িত্ব আপনার।”
অরণ্যের কথাগুলো সিমরানের বুকে তীরের মতো বিঁধল। তার শরীর কেঁপে উঠল, মনে হল যেন তার ভেতরের সব শক্তি কেউ চুষে নিচ্ছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। তার বাবার জীবন এখন এই চুক্তির ওপর ঝুলছে। সে মাথা নিচু করে, নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল। তার হৃৎপিণ্ড বলছে পালিয়ে যেতে, কিন্তু পা যেন মাটিতে আটকে গেছে। সে ধীরে ধীরে ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিল। অফিসের দরজার দিকে পা বাড়াল, তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন একটা অসহনীয় বোঝা বহন করছে। ঠিক তখনই অরণ্য পিছন থেকে বলে উঠল,
—“দাঁড়ান, আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি। আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেবে।”
সিমরান থমকে দাঁড়াল। তার কণ্ঠে দৃঢ়তা ফিরে এল, যেন এই ছোট্ট মুহূর্তে সে তার হারানো সম্মানের এক টুকরো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে মুখ ফিরিয়ে বলল,
— “তার দরকার হবে না। ধন্যবাদ মিস্টার অরন্য চৌধুরী ।”
সে আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিমরানের চোখ দিয়ে আবার জল গড়িয়ে পড়ল। সে লিফটের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল, হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর। বাইরের জগৎ এখন যেন তার কাছে একটা অন্ধকার গহ্বর।
অন্যদিকে অরণ্য তার অফিসের জানালা দিয়ে শহরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে একটা অদ্ভুত রহস্যময় হাসি। অরণ্যের এই পদক্ষেপ কি সিমরানকে কাছে পাওয়ার পরিকল্পনারই অংশ? নাকি এই চুক্তির পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোন রহস্য?
চলবে..!
Pingback: Opurno Prem Part 3 Bangla Golpo - Mdigitech