Mdigitech

Aboddho Prem Part 5 | Love Story

ছুটির ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই রূপ চেয়েছিল জানের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যেতে। কিন্তু সে চেষ্টায় ব্যর্থ হলো। গেটের সামনেই জান দাঁড়িয়ে, সরাসরি তার পথ আটকে দিল।
রূপ থেমে দাঁড়াল। আগের সেই ভয় আর নেই তার চোখে। বরং ঠোঁট শক্ত করে বলে উঠল,
— “কি চাই? সকালে যা করেছি, একদম ঠিক করেছি। আমার কোনো অপরাধবোধ নেই। তাই এসব নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।”
জান ঠান্ডা গলায় জবাব দিল,
— “আমি কি বলেছি তুমি ভুল করেছো?”
— “তাহলে রাস্তা আটকেছেন কেন?”
— “ফোনটা দাও।”
— “মানে?”
— “মানে, তোমার ফোনটা আমাকে দাও।”
রূপ হতবাক হয়ে বলল,
— “আপনাকে আমি আমার ফোন দেব কেন?”
— “কারণ আমি চেয়েছি।”
— “আপনি চাইলেই আমাকে দিতে হবে?”
— “না দিলে, জোর করেই নিতে হবে।”
রূপ চোখ বড় বড় করে তাকাল।
— “মানে কী?”
জান আর কিছু না বলে হঠাৎ করেই রূপের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিল।
— “আপনি কী করছেন!এ এ এটা অসভ্যতা!”
জান মুখে একধরনের রহস্যময় হাসি এনে বলল,
— “হ্যাঁ, জানি। অনুমতি ছাড়া মেয়েদের ব্যাগে হাত দেওয়া অসভ্যতা।”
— “জানেন, তবু করেছেন?”
— “অসভ্যরা কি কখনো ভদ্রতা করে? তুমি তো নিজেই সকালে বলেছিলে, আমি অসভ্য। তাই এখন অসভ্যতা করছি।”
বলতে বলতে জান রূপের ফোন থেকে নিজের নম্বর ডায়েল করে একটি মিসকল দিল। তারপর ফোনটা ফেরত দিয়ে বলল,
— “হয়ে গেল ?
–” কী হয়ে গেল?
—” আমার নম্বর দিয়ে দিলাম।”
রূপ হতবাক, তারপর মুখ শক্ত করে বলল,
— “আমি কি আপনার নম্বর চেয়েছিলাম?”
— “চাওনি। কিন্তু আমার দরকার ছিল। তোমার মতো মেয়েরা সাধারণত নম্বর চাইলে দেয় না, আর দিলেও ভুল নম্বর দেয়। তাই আমি নিজেই ব্যবস্থা করলাম।”
— “আমি এখনই ব্লক করে দেব।”
— “ব্লক করবে? ঠিক আছে করো, কে মানা করেছে?তাছাড়া আমি তো বলিনি আমি তোমার নম্বর নিয়েছি? বলেছি তোমাকে আমার নম্বর দিয়েছি। মানে, আমি কখনো তোমাকে ফোন করব না। তুমি চাইলে করতে পারো।”
রূপ চোখে রাগের আগুন নিয়ে বলল,
—“আমি কখনো আপনাকে ফোন করব না।
—“সেতো সময়েই বলে দিবে, করবে কি করবে না।
রূপ ততক্ষণে ঝড়ের মতো বলে উঠেছে—
—“এমন অদ্ভুত ছেলে আমি জীবনে দেখিনি!”
জান থামল না, বরং নিজের ছন্দে সুর মিশিয়ে জবাব দিল,
—“আমিও তোমার মতো মিষ্টি মেয়ে কোনোদিন দেখিনি।”
রূপ থমকে গেল। চোখ বড় বড় করে জানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“কি! কী বললেন আপনি?”
জান গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকাল,
—“কী বললাম? দুষ্টু মেয়েকে দুষ্টু বলা যাবে না?”
রূপ এবার এক ধাপ এগিয়ে এলো, চোখে আগুন—
—“আপনি দুষ্টু বলেননি, আপনি বললেন মিষ্টি!”
জান এবার যেন থামল এক মুহূর্ত। তারপর চোখে দুষ্ট হাসির ঝিলিক এনে বলল,
—“আচ্ছা বলো তো, আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয় ? যে তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়েকে মিষ্টি বলব? কোন দিক দিয়ে নিজেকে মিষ্টি মনে হয় তোমার? একটু আয়নায় তাকাও তো?”
রূপ এবার বিরক্ত হয়ে সরে দাঁড়াতে চাইল।
—“আপনার কপাল ভালো, শুধু ঝগড়া করেছি, কিছু ছুঁড়িনি।”
জান হেসে বলল,
—“শরীরে এতটুকু মাংস না থাকলে কী হবে, সাহস আছে ষোল আনাই। এতেই বা কম কী?”
রূপ বিরক্ত হয়ে ব্যাগটা ঠিক করল,
—“দয়া করে সামনে থেকে সরুন, বাসায় যাব।”
জান এবার চোখে একরাশ গাম্ভীর্য এনে বলল,
—“জি ম্যাডাম, যান। শুনেছি তুমি এই এলাকায় নতুন এসেছো। বাসায় শুধু মা থাকেন, কোনো ভাই, কোনো আত্মীয় নেই। যদি হঠাৎ কোনো বিপদে পড়ো, তখন পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে খুঁজে না পাও। তাই নাম্বারটা দিয়েছি। ভয় পেয়ো না, আমি জিসান চৌধুরী, ফোন করে কোন মেয়েকে বিরক্ত করার মতো ছেলে আমি নই। আমি কখনো তোমাকে ফোন করব না। তবে তোমার যদি কোনো দরকার হয়, কোনো বিপদে পড়ো, তখন আমাকে ফোন করো। পাশে পাবে।”
রূপ ঠোঁট চেপে তাকাল। ঠোঁটের কোণ যেন কিছু বলতে চায়, তবু বলল শুধু—
—“আমি আপনাকে কখনো ফোন করব না।”
জান মাথা নেড়ে হাসল,
—“সেটা সময়ই বলে দেবে। এখন বাসায় যাও।”
তারপর রাস্তায় তাকিয়ে হাত তুলে ডাকল,
—“মামা, আপাকে রিকশায় তুলে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো।”
রিকশাওয়ালা মাথা নেড়ে এগিয়ে এল। জান এবার রূপের দিকে তাকিয়ে বলল—
—“কি হল, দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও।”
রূপ এক পা পিছিয়ে বলল,
—“আপনার ভাড়া করা রিকশায় আমি কেন যাব?”
জান এবার গম্ভীর হয়ে তাকাল। স্বরের গভীরতায় তীক্ষ্ণতা মিশে গেল—
—“ম্যাডাম, জানকে ভদ্রতা শেখাতে হবে না। আমি জানি, কতটা অধিকার দেখানো যায়, কতটা যায় না। আমার সঙ্গে বাইক ছিল, চাইলে আমি তোমাকে বলতাম আমার পেছনে উঠতে,বলিনি।এমনকি রিকশার ভাড়াও দেইনি। শুধু ডেকে দিয়েছি, যেন নিরাপদে পৌঁছাও। এখন চুপচাপ ওঠো। না হলে কানের নিচে এমন মারব, বুঝে যাবে—অসভ্যতা আসলে কাকে বলে।”
রূপ থতমত খেল। প্রথমবার জানকে এমনভাবে কথা বলতে দেখল। তবু কিছু না বলে ধীরে ধীরে রিকশায় উঠল।
রিকশা চলতে শুরু করল, জান তার পেছনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখে ছিল কিছু বলা হয়নি এমন একটা অনুভব, আর ঠোঁটে… এক ফোঁটা ঠেকিয়ে রাখা হাসি।
রাত নামার আগেই রুপ ঠিক করেছিল—কাল থেকে জানকে এড়িয়ে চলবে। ছেলেটা ভয়ঙ্কর, অদ্ভুত, আবার কোনো এক অজানা কারণে তাকে দেখলেই বুকের ভিতর কেমন ছটফট করে ওঠে। কোথাও যেন কী একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে, অথচ ভুলটা ঠিক কোথায়, রুপ নিজেও জানে না।

চলবে..!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top