Mdigitech

Aboddho Prem Part 1 | Bangla Love Story

অগ্নি ঝরা চাহনি আর কপালের মাঝ বরাবর কালচে নীল হয়ে ফুলে ওঠা শিরা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে—জিসান আজ প্রচণ্ড রেগে আছে। অসম্ভব বদমেজাজি এই ছেলের পুরো নাম জিসান চৌধুরী। তবে সবাই তাকে “জান” বলে ডাকে। কে জানে, বাচ্চাকালে আদর করে কে যেন তার নাম জিসান থেকে ছোট করে ‘জান’ করে দিয়েছিল, তখন থেকেই এটাই তার ডাকনাম হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে, ভদ্র, শান্ত আর লক্ষ্মী প্রকৃতির অল্পবয়সী এক তরুণীর নাম রূপ। তার কোনো ডাকনাম নেই। একটাই নাম—রূপ। নামের আগে-পিছে কিছু নেই। কেন নেই, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও উত্তরটা রূপের নিজেরই অজানা। তাই সে উত্তর দিতে পারে না। তবে নামের সাথে তার চেহারার আশ্চর্যজনক মিল আছে—গোলগাল মুখশ্রী, দুধে আলতা গায়ের রং, ঘন পাপড়িতে ঢাকা চোখ, কাজল কালো লম্বা চুল। মেয়েটার মধ্যে যেন এক ধরনের স্বচ্ছ শুভ্রতা ছড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকালে মনে হয়, যেন সবে ফুটে ওঠা এক অনন্য গোলাপ।

রূপ সদ্য ভার্সিটিতে পা দিয়েছে। জিসান তার তিন বছরের সিনিয়র। দুজনই একই ভার্সিটিতে পড়ে। জিসান বড়লোক বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। দেখতে যেমন সুদর্শন, তেমনি রাগী ও কর্তৃত্বপরায়ণ। শহরের প্রতিটা অলিগলি যেন তাকে সমীহ করে চলে। রূপও তার ব্যতিক্রম নয়—সে-ও জিসানকে ভয় পায়। ‘জান’ রেগে যাবে—এই ভয়টা তার মনে সবসময় কাজ করে। তবুও হুটহাট জান রেগে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রূপ নিজের ক্লাসে বসে বই পড়ছিল। হঠাৎ জান ক্লাসে ঢুকেই রূপের চুলের মুঠি ধরে রুক্ষ কণ্ঠে ধমকে বলল,

— “এই, উঠ!”

জিসানের আচরণে রূপ হতভম্ব হয়ে গেল। জান হুট করে এমন একটা কাজ করায় তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু জিম ছুটে এসে উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— “কি করছিস জান! সিনক্রিয়েট করিস না। ঠান্ডা মাথায় কথা বল।

_” ঠান্ডা মাথায় কথা বলার অবস্থা রেখেছে এই মেয়ে?

_” জান! ক্লাসের সবাই দেখছে, কী করছিস?”

— “আমি কী করছি সেটা তোদের চোখে পড়ছে! আর এই মেয়েটা যা করছে, সেটা কিছুই চোখে পড়ছে না?”

রূপ অবাক হয়ে বলল,
— “কি হয়েছে, জিসান ভাই? আমি কী করেছি?”
রূপের এতটুকু কথায় জানের রাগের আগুনে ঘী পড়ল। সে রূপের চুল টেনে বলল,

— “কী বললি?”

সঙ্গে সঙ্গে জিম বাধা দিয়ে বলল,
— “থাম জান! এটা কী ধরনের অসভ্যতা? ছাড় ওকে!”

জান চিৎকার করে বলল,
— “কেন ছাড়ব? আমাকে রাগানোর আগে তার মনে থাকে না?”

রূপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “আপনাকে রাগানোর মতো,কী করেছি আমি?”

জান চেঁচিয়ে বলল,
— “পুরো পৃথিবী যেখানে আমাকে জান বলে ডাকে, সেখানে তুই ‘জিসান ভাই’ বললি কেন?”

রূপ শান্তভাবে উত্তর দিল,
— “ডাকনাম না বলে পুরো নাম বলেছি, এটাই কি আমার অপরাধ? তার জন্য গায়ে হাত তুলবেন?”

— “গায়ে হাত? এইটুকুতেই গায়ে হাত তোলা মনে হচ্ছে? তাহলে সত্যি সত্যি যদি গায়ে হাত তুলতাম, তখন তোর কী অবস্থা হতো—ভাবতে পারিস?”

— “আমি কি কোনো অন্যায় করেছি, যে আপনি আমাকে মারবেন? আপনাকে ‘জান’ না বলে ‘জিসান ভাই’ বলা কি অন্যায়?”

— “নাহ, তোর অন্যায় যদি এত সামান্য হতো, তাহলে তো মেনেই নিতাম।”

— “তাহলে কি করেছি আমি?”

— “একদম চুপ! নাটক করিস না। তুই জানিস না, কী করেছিস?”

— “জানলে কি আর প্রশ্ন করতাম? বলুন, আমি কী করেছি?”

কথাটা শেষ করার আগেই জান আবারও চেঁচিয়ে উঠল,
— “প্রশ্নটা তোর নয়, আমার করার কথা!”

বলে জান রূপের চুলের মুঠি ছেড়ে দিল। জানের ধমকে রূপ কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। কিন্তু সাথে সাথেই জান আবার শক্ত হাতে রূপের গাল চেপে ধরল।জানের এমন আচরণে ক্লাসের সবাই হতবাক। জান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রূপকে বলল,
— “আমাকে মানুষ মনে হয় না তোর? নিজেকে কী ভাবিস তুই?”

রূপ উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কারণ, জান শক্ত হাতে তার গাল চেপে ধরে রেখেছিল। তবুও সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু জানের শক্তির সঙ্গে পেরে উঠছল না। জান তাকে ছাড়তে নারাজ।
জানের বাড়াবাড়ি দেখে জিম তাড়াতাড়ি এসে রূপকে জানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
— “কী করছিস জান? কিছু বলার থাকলে ভদ্রভাবে বল।”
জান রুক্ষ কণ্ঠে জবাব দিল,
— “অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি। এই মেয়ে ভদ্রতার ভাষা বুঝে না।”
জিম বলল,
— “যত যাই হোক, তুই সবার সামনে একটা মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারিস না।”
জান তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
— “সেটাই তো! ও যা খুশি করতে পারে, আর আমি কিছু করলেই দোষ! আচ্ছা জিম, আমি আর কত সহ্য করব বল তো? তাকিয়ে দেখ—মুখ দেখে মনে হচ্ছে, যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না! ইচ্ছে করছে এখানেই পুঁতে রেখে দেই!”

— “জান, সবার সামনে এসব কী বলছিস?”

— “ঠিক আছে, সবার সামনে আর কিছু বলব না।”

এই বলে জান রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “এই তুই এখনই বাইরে আসবি! তোর সঙ্গে আমার কথা আছে। আজ আমি সবকিছুর শেষ দেখে ছাড়ব! এখন যদি এদিক-ওদিক করিস, তবে কপালে দুঃখ আছে—সতর্ক করে দিলাম।”

বলে হনহন করে বেরিয়ে গেল জান।
জানের আচরণে রূপ প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। জান এর আগে রাগ দেখালেও কখনো রূপের গায়ে হাত তোলেনি। এই প্রথম এমন কিছু করল বলে রূপ ভয় পেয়ে জিমকে প্রশ্ন করল,
— “কী হয়েছে ভাইয়া? উনি এত রেগে আছেন কেন?”
জিম হঠাৎ উত্তরে বলল,
— “আমাকে প্রশ্ন করছো কেন? নিজে কী করেছো জানো না? প্রতিদিন তুমি নতুন নতুন ঝামেলা করবে, আর জান চুপচাপ সহ্য করবে—এটাই তোমার ধারণা? তুমি কি জানো না, জান কেমন? ও এসব সহ্য করতে পারে না।”
— “কী করেছি আমি?”
— “আবার প্রশ্ন করছো? এমন ভাব করছো, যেন সত্যিই ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানো না! এত অভিনয় কীভাবে করো?”

আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।”
— “ওহ, তাই? তাহলে তুমিই বলো—গতকাল সন্ধ্যায় কী হয়েছিল?”
রূপ মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ থাকল, তারপর বলল,
— “ভাইয়া, জিসান ভাইয়ের সঙ্গে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। আমি উনার প্রেমিকা,বান্ধবি কিংবা ছোট বোন, কেউ না। এমনকি উনার পরিবারেরও কেউ না। কদিন আগে পর্যন্ত উনি আমাকে চিনতেন না পর্যন্ত তবুও উনি যখন তখন আমার সাথে এমন আচারন করেন এটা কি ঠিক? আমি যাই করি না কেন, উনি আমার সঙ্গে যা খুশি করতে পারেন না।”

— “তাহলে আর কী! যাও, জানকে গিয়ে এসবই বলো । তারপর সারাজীবন হুইলচেয়ারে বসে কাটিয়ে দিও!”
— “আপনিও আমার ওপর রেগে আছেন?”

রূপের দিকে তাকিয়ে জিমের রাগ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। গলা নিচু করে বলল,
— “আই’ম সরি রূপ। তোমার সঙ্গে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। কিন্তু কী করব বলো, জানের সঙ্গে কেউ অন্যায় করলে আমি সেটা সহ্য করতে পারি না।”
— “আমি ওনার সঙ্গে অন্যায় করেছি?”

— “দেখো রূপ, তুমি ছোট বাচ্চা না যে বুঝবে না জান কী চায়। জান তোমাকে ভালোবাসে—এটা ভার্সিটির প্রতিটা মানুষ বোঝে, আর তুমি বোঝো না?”
রূপ উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে রইল।

— “রূপ, তুমিও তো জানকে অপছন্দ করো না, সেটা আমি বুঝি। তাহলে ওর সঙ্গে সম্পর্কে গেলে তোমার সমস্যা কী? ভার্সিটির এত মেয়ে জানের জন্য পাগল, আর তুমি? সবসময় এমন একটা ভাব নিয়ে থাকো, যেন তুমি রাজকুমারী আর ও রাস্তার ছেলে, পাত্তা দাও না!”

— “ভুল বললেন ভাইয়া। আমি রাজকুমারী নই বলেই রাজকুমারের রানি হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।”

_”আমি এভাবে বলতে চাইনি, রূপ। তুমি তো জানো, আমি আর জান, দুজনেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না। তবুও, আমি যথেষ্ট চেষ্টা করছি তোমাকে আঘাত না করার, কিন্তু তুমি তো কিছু বুঝতে চাইছো না। দেখো রূপ, আমি তোমার ক্ষতি চাই না, তাই অনুরোধ করছি, একটু বুঝার চেষ্টা করো। তুমি যা করছো, সেটা ঠিক না। জানকে এভাবে রাগালে, তাকে সামলাতে পারবে না। ও তোমার বড় কোনো ক্ষতি করে বসবে। জান ছোট থেকে যা যা চেয়েছে, সব আদায় করে নিয়েছে—হয় ভালোভাবে, অথবা জোর করে। তোমার সাথে জোর করলে, সেটা কি তোমার জন্য ভালো হবে? সমাজ সেটাকে ভালো চোখে দেখবে?

— “ভাইয়া, আমি…”

— “রূপ, তোমাকে আমি যথেষ্ট পছন্দ করি। চোখের সামনে তোমার ক্ষতি আমি কিভাবে মেনে নেবো? আমি জানকে খুব ভালোভাবে চিনি, ও কিছুতেই তোমার পিছু ছাড়বে না। আসলে, ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না, তাই বলছি, তুমি যদি ওর কথা একটু ভেবে দেখতে, আমি খুশি হতাম।”

— “আমি আসলে…”

— “থাক, আমাকে আর কিছু বলতে হবে না। এখন জানের কাছে যাও। এমনিতেই রেগে আছে, এখন না গেলে তাণ্ডব শুরু করে দেবে।”

রূপকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, জিম তাকে ক্লাসরুম থেকে বাইরে পাঠিয়ে দিলো। রূপ বাইরে এসে এদিক-ওদিক জানকে খুঁজতে লাগল, কিন্তু জান কোথাও নেই। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর, রূপ ভাবল ফিরে আসবে, কিন্তু হঠাৎ হাতে টান পড়ল। রুপ ভালোভাবে বুঝে উঠার আগেই দেখলো জানের এক হাতে জলন্ত সিগারেট অন্য হাতে তার হাত বন্দী।

জানের সিগারেট হাতের দৃশ্যটা রূপের মনটা মুহূর্তে খারাপ করে দিলো, কারণ জান সিগারেট খাক, রূপ তা চায় না। তবে, এখন এদিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।কারন জান রুপকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে ভার্সিটির পিছন দিকটায় গিয়ে থামলো।
ভার্সিটির এদিক সচরাচর কেউ আসে না। এমনকি জান নিজেও রূপকে অনেকবার নিষেধ করেছে এই দিকে যেন না যায়, কিন্তু জান নিজেই আজ তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। দেখে রূপের মনে খটকা লাগল, ভয়ে ভয়ে জানের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। রূপের দিকে তাকিয়ে জান রাগে নিজের ঠোঁটে চেপে রাখা আধপোড়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে জলন্ত চোখে তাকালো, তারপর বলল,
— “এই, আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দে, নিজেকে কী ভাবিস তুই?”

রূপ ভিতু গলায় প্রশ্ন করল,
— “আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?”

— “তো, আপনার সাথে আমার কিভাবে কথা বলা উচিত, ম্যাডাম? দয়া করে আমাকে শিখিয়ে দিন, সেভাবেই বলি।”

— “আপনার সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে আমার নেই। কী বলতে চান, বলুন।”

— “এতকিছুর পরেও চেঁচিয়ে কথা বলতে বুক কাঁপছে না?”

— “মানে?”

— “মানে তো, তুই বলবি। আমাকে কী মনে হয় তোর?”

— “ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি বলুন, কী বলতে চাইছেন?”

— “গতকাল তোকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছিলো?”

কথাটা শোনে, রূপের অন্তর আত্মা যেন উড়াল দিল। ভয়ে, উত্তর দিতে পারল না। সে বুঝে উঠতে পারল না, জান এসব কীভাবে জানলো। রূপ উত্তর না দেওয়ায় জান এবার দ্বিগুণ রাগ নিয়ে বলল,

— “বিয়ে করার এতই শখ?”

— “আ আ, আপনি কী করে জানলেন আমাকে দেখতে এসেছিল?”

— “তুই ঢং করে বেড়াবি আর আমি জানব না, সেটা কীভাবে হয়? আমি তো তোর প্রতিটা নিঃশ্বাসের খবরও রাখি।”

— “কিন্তু এখানে ঢংয়ের কী আছে? আমার বিয়ের বয়স হয়েছে, এখন বিয়ের কথাবার্তা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?”

— “এই চুপ! একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবি না।  ভাবিস না, তুই মেয়ে বলে আমি তোর গায়ে হাত তুলতে পারব না। ইচ্ছে করছে, যাস্ট মেরে মাঠিচাপা দিয়ে দিই।”

— “দেখুন, জিসান ভাই, আপনার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক নেই যার জন্য আপনাকে কইফত দিতে হবে।”

— “রূপ, তুই কী বুঝতে পারছিস, তুই কী করছিস?”

— “আপনি কী বুঝতে পারছেন না? আপনি যেটা করছেন, সেটা ভুল করছেন।”

— “ভুল? কোনটা ভুল?আমি তোকে ভালোবাসি তুই সেটা জানিস না? তাহলে তুই আমাকে রেখে অন্যকাউকে কেন বিয়ে করবি?

_” আপনি ভালোবাসতেই পারেন কিন্তু আমি তো কোনদিন বলিনি আমি আপনাকে ভালবাসি।

_” বাহ তুই এতদিন আমাকে ব্যবহার করে এখন অন্য ছেলেকে বিয়ে করবি আর আমি সেটা চুপচাপ সহ্য করব?”

— “আমি আপনাকে ব্যবহার করেছি?”

— “করিসনি? দিন-রাত কুকুরের মতো নিজের পেছনে ঘুরাস নি।”

— “আমি আপনাকে ঘুরতে বলেছিলাম? কেন ঘুরেছেন?”

— “তুই কী, দুধের বাচ্চা যে বুঝিসনি আমি কী চাই?”

— “কি চান আপনি?”

— “যাস্ট বলেছিলাম, গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট করার সুযোগ দে। যাইহোক, সময় দিতে না চাইলে দিস না, কিন্তু আমাকে জানাবি না? আমার কি তোর দায়িত্ব নেয়ার মতো ক্ষমতা নেই? আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে, তোকে রানী করে রাখার ক্ষমতা আছে আমার। তুই একবার বলতি তুই এখন বিয়ে করতে চাস।”

— “দেখুন, জিসান ভাই, আমি আপনাকে কখনো বলিনি, আমার পেছনে ঘুরোন অথবা আমি আপনাকে বিয়ে করব। আপনার সাথে আমি প্রেমও করিনি। তাহলে কেন আপনাকে বলব?”

— “এই, তোর সাথে আমি ভালোভাবে কথা বলছি, মানে এই না যে তুই যা ইচ্ছা বলবি, আমাকে একদম রাগাবি না।

—” আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?

—“বুঝেছি, তোর সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই, আমি আন্টির সাথে কথা বলব।”

— “নাহ, আপনি মাকে কিছু বলবেন না। বিয়ের সিদ্ধান্ত আমার, এতে মায়ের কোনো হাত নেই।”

— “তুই কী জানিস, আমি না চাইলে বিয়ে করা তো দূর, তুই ঘর থেকেও বের হতে পারবি না?”

— “আপনি কেন বুঝতে চাচ্ছেন না? আমি আপনার এসব পাগলামিতে বিরক্ত হচ্ছি। দয়া করে এসব করা বন্ধ করুন। আমাদের সহজ সম্পর্কটা জটিল করবেন না, প্লিজ।”

— “আমি পাগলামি করছি?”

— “হ্যা, করছেন। আমাদের মাঝে কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। আমি কখনো বলি নি আপনাকে ভালোবাসি অথবা এমন কোনো কথা দেইনি যে আপনাকে বিয়ে করব। তাহলে এমন আচরণ কেন করছেন?”

— “ঠিক আছে, মেনে নিলাম আমাদের মাঝে তেমন সম্পর্ক নেই, কিন্তু সম্পর্ক হতে সমস্যা কোথায়? কী নেই, আমার দেখতে খারাপ নাকি রাস্তার ছেলে, কোনটা? আমি তোকে বিয়ে করতে চাই, বিনিময়ে কী চাস, বল, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, যা চাইবি সব দেব।”

— “আপনি চুপ করবেন, প্লিজ। আমি এই নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না, আমাকে আমার মতো থাকতে দিন, প্লিজ।”

— “আর আমি…? আমি কী নিয়ে থাকব?”

— “কারো জন্যে কারো জীবন আটকে থাকে না।”

— “এটাই তাহলে তোর শেষ কথা?”

_” হ্যা এটাই আমার শেষ ক…

পুরো বাক্যটা শেষ করার সুযোগ পেল না রুপ তার আগেই জান তার ঠোঁট দখল করে নিল। ঘটনার আকস্মিকতায় রুপ যেন পাথর হয়ে গেল। জানের এক হাত তার ঘাড়ে, অন্যহাত কোমড়ে। ঠোঁট দুটি নিজের ঠোঁটের উপর অনুভব করল। মুহূর্তে কেঁপে উঠলো রুপ। জান এমন কিছু করতে পারে তার ধারনাতেও ছিল না। তবে জানের এই কর্মকান্ড বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। রুপের ঠোঁটে কয়েক মুহুর্ত রাজত্ব চালিয়ে নিজ থেকেই ছেড়ে দিল তারপর ঠোঁটে হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখ সরু করে থাকলে রুপের দিকে। পুরো ঘটনা জুড়ে রুপ স্তব্ধ হয়ে ছিল এবারেও কিছু বলতে পারল না শুধু ঠোঁট গুলো মৃদু কেঁপে উঠল।

জান নির্লজ্জের মত বলে উঠল,
_” এই ঘটনা থেকে কি বুঝতে পারলি?

রুপের চোখ ফেঁটে কান্না পাচ্ছে সে কান্না আটকে রাখার চেষ্টায় উত্তর দিতে পারল না। জান আবার বলল,

_” বুঝে না থাকলে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি,কোন মেয়েকে বিছানায় নিতে জিসান চৌধুরীর যাস্ট ২ মিনিট সময় লাগবে না, ইনফেক্ট এই মুহুর্তে আমি তোর এমন অবস্থা করতে পারি যার পরে তুই কোনদিন সমাজে মুখ দেখাতে পারবি না বুঝেছিস?

কথাগুলো কানে যেতেই রুপ আঁতকে উঠল চারদিকে তাকিয়ে দেখল আশেপাশে কেউ নেই। তবে কি জান তার সাথে খারাপ কিছু করার জন্যই এখানে নিয়ে এসেছে? ভেবেই রুপ পিছু ঘুরে চলে যেতে চাইলো কিন্তু তা সম্ভব হল না। জান হ্যাচকা টানে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে দিল।

রুপ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না কেঁদে ফেলল। কেঁদে কেঁদেই বলল,
_” কিছু করবেন না প্লিজ। আমাকে যেত দিন।

জান একগাল হেসে জবাব দিল,
_” থাম কাঁদিস না। জিসান চৌধুরীর এখনো এত খারাপ সময় আসেনি যে জোর করে কারো সাথে কিছু করতে হবে। আমি চাইলেই তোকে আমার বিছানায় নিতে পারি, কিন্তু নিব না। কেন নিব না জানিস? কারন, আমি চাই তুই নিজে থেকে আমার কাছে আয়। ভালোয় ভালোয় বলেছিলাম, রাজি হলি না। ঠিক আছে, আজকের পর আমিও দেখে নিব, তুই কীভাবে রাস্তায় বের হোস।

— “কী করবেন আপনি?”

— “রক্ষিতা বানিয়ে রাখবো তোকে তাও তুই নিজ থেকে তাতে রাজি হবি।

— “ছিঃ! কীসব বলছেন? লজ্জা করছে না?”

— “নাহ, করছে না। হুট করে আমি তোর জীবনে ঢুকে পড়িনি, তুই নিজে থেকে এসেছিলি আমার জীবনে। তাই এত সহজে তো ছেড়ে দেব না। সম্মান দিয়ে ঘরের বউ করতে চেয়েছিলাম, তুই রাজি হোসনি, এখন আমিও দেখন তুই আমার গণ্ডি থেকে কীভাবে বের হতে পারিস…”

— “আপনি আমায় হুমকি দিচ্ছেন?”

— “নাহ, একটু আগেই দেখেছিস তোকে ভোগ করার হলে এখনী করতে পারি। আমাকে আটকানোর ক্ষমতা তোর নেই। কিন্তু আমি তা করব না। তারমানে তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করব না। কিন্তু তুই বাধ্য হবি, নিজেকে আমার কাছে বিলিয়ে দিতে।”

_” আমার সাথে আপনি এমন কেন করছেন?

_” কারন আমি তোকে ভালোবাসি।

_” এটা কেমন ভালোবাসা?

_” সময় হলেই বুঝতে পারবি। এখন এসব বাদ দিয়ে চোখের সামনে থেকে বিদায় হ, নাহলে কি থেকে কি করে ফেলব নিজেই জানি না।

রুপ আর একটাও কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে গেল…কারন রুপ জানে,জান যা খুশি করতে পারে। রুপের চলে যাওয়ার তাড়াহুড়ো দেখে জান হাসলো সাথে সাথে আনমনে বলল,

_” কোথায় পালাবি রুপ? তুই যে শুধুই আমার! আমার এই “কাঁচামিটে ভালোবাসা”র গন্ডি পেরিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তোর নেই..

চলবে..!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top