অরণ্য সিমরানকে একটি দীর্ঘ করিডর দিয়ে নিয়ে গেল, যার শেষে পাশাপাশি দুটি বিলাসবহুল ঘর। ঘরের দরজা খুলতেই সিমরানের চোখে পড়ল ঝকঝকে সাজানো-গোছানো একটি কক্ষ—বড় জানালা, সিল্কের পর্দা, আর নরম গদিওয়ালা বিছানা। কিন্তু এই বিলাসিতা সিমরানের কাছে একটি সোনার খাঁচার মতোই মনে হল। তার হৃৎপিণ্ড ভারী হয়ে এল।
অরণ্য সিমরানকে নিয়ে ঘরে ঢুকল এবং বলল, “আজ থেকে এটা তোমার ঘর। দিনের বেলায় তুমি এখানে থাকবে। আর রাতের বেলায়…” সে একটু থামল, তারপর চোখ সরু করে বলল, “রাতের বেলায় আমার ঘরে, আমার সঙ্গে থাকবে।”
সিমরানের গা ঘিনঘিন করে উঠল। অরণ্যের কথাগুলো তার হৃৎপিণ্ডে বিষের তীরের মতো বিঁধল। তার চোখে ভয় আর ঘৃণা মিশে গেল। তার মন কিছু বলতে চাইল, প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করল—বিয়ে ছাড়া এমন নিষিদ্ধ একটা সম্পর্কে জড়াতে আপনার বিবেকে বাধছে না? কিন্তু প্রশ্নটা গলায় এসে আটকে গেল, মুখ দিয়ে বের হল না। গত একদিনে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে অনেক কিছুই বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।
সিমরান চুপ করে কথা গিলে ফেলল, কিছু বলল না। সে জানে, এই সোনার খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পথ তার জন্য খোলা নেই। তার বাবার জীবনের মূল্যে সে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে, কিন্তু এই অপমানের বোঝা সে কতদিন বহন করতে পারবে?
সিমরানের চুপ থাকা দেখে অরণ্য বলল,
“নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, তাই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আজকের রাতটা সুযোগ দিচ্ছি। কাল থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু। কাল থেকে আমাকে খুশি রাখার দায়িত্ব শুরু হবে। আপাতত বিশ্রাম নাও। কিছু দরকার হলে আমাকে বলো, পাশের ঘরটাই আমার। আমি এখন যাই, তুমি বিশ্রাম নাও।”
বলেই অরণ্য ঘুরে চলে গেল, তার পায়ের শব্দ করিডরে মিলিয়ে গেল।
সিমরান দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। তার হাত কাঁপছে, শরীর অবশ হয়ে আসছে। দরজায় হেলান দিয়ে সে মেঝেতে বসে পড়ল, তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে শুরু করল। সে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে প্রশ্ন করল—কেন? কেন তার সঙ্গে এমন হল? কেন তার জীবন এমন একটা অন্ধকার পথে এসে ঠেকল? তার মাথায় অরণ্যের কথাগুলো ঘুরছিল—“রাতের বেলায় আমার ঘরে আমার সাথে থাকবে।”
কথাটা মনে হতেই সে চোখ বন্ধ করে নিল, কিন্তু তার মনের ভেতর অরণ্যের সেই নির্লজ্জ হাসি, তার অপমানজনক কথাগুলো বারবার ফিরে আসছিল। তার মনে হচ্ছিল, সে শুধু এই বাড়িতে বন্দী নয়, তার আত্মা, তার স্বাধীনতা—সবকিছু এই সোনার খাঁচায় চিরতরে আটকে গেছে।
সিমরান বিছানার কাছে গিয়ে বসল, তার হাতে তার ছোট ব্যাগটা শক্ত করে ধরা। সে ব্যাগ থেকে তার বাবার একটা পুরোনো ছবি বের করল। ছবিতে তার বাবার হাসিমুখটা দেখে তার চোখ আরও ভিজে গেল।
“তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও, বাবা। আমি তোমার জন্য সব মেনে নেব, কিন্তু এই অপমান… এই জীবন… আমি কতদিন সহ্য করতে পারব?”
ঘরের বিলাসিতা সিমরানের কাছে বিষের মতো লাগছিল, দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, তার মনে হচ্ছিল, এই অন্ধকার তার জীবনের প্রতিচ্ছবি। সে জানে, এই খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পথ তার জন্য খোলা নেই। কিন্তু তার ভেতরের একটা ক্ষীণ কণ্ঠ তাকে বলছিল—এই অন্ধকারের মধ্যেও হয়তো কোথাও একটা আলোর সম্ভাবনা আছে।
সিমরান তার ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে অন্ধকার শহরের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ তার মনে পড়ল অরণ্যের মা, মানে তার খালামনি। যদি অরণ্যের বাবা এই ঘৃণ্য সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন, তাহলে তার খালামনি নিশ্চয়ই নিজের ছেলের এই নির্লজ্জ আচরণ মেনে নেবেন না। তিনি নিশ্চয়ই সিমরানকে রক্ষা করবেন। ভাবনাটা মাথায় আসতেই তার মনে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা জাগল। হয়তো এটাই তার বাঁচার একমাত্র পথ।
সিমরান মনে মনে ঠিক করল, সে তার খালামনির কাছে যাবে। তাকে সবকিছু খুলে বলবে—চুক্তির কথা, অরণ্যের অমানুষিক আচরণ, তার বাবার জীবন বাঁচানোর জন্য করা আত্মত্যাগ। হয়তো তার খালামনি তাকে এই সোনার খাঁচা থেকে মুক্তি দেবেন। এই ভাবনা তাকে একটা অদ্ভুত সাহস জোগাল। কিন্তু সে জানে না তার খালামনি এখন কোথায়। বিশাল বাড়িতে তার ঘর কোনটা, তাও জানে না। তাই সে ঠিক করল, অরণ্যের কাছেই জানতে হবে।
কাঁপা কাঁপা পায়ে সিমরান নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে অরণ্যের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বিশাল বাড়ির নিস্তব্ধ করিডরে তার পায়ের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। অরণ্যের ঘরের দরজায় পৌঁছে সে কিছুটা দ্বিধা অনুভব করল, কিন্তু তার খালামনির কথা মনে পড়তেই সে দরজায় টোকা দিল। দরজা খুলতেই দেখল অরণ্য তার শার্টের বোতাম খুলছে। সিমরানকে দেখে অরণ্য কিছুটা বিব্রত হয়ে তাড়াতাড়ি শার্ট ঠিক করল এবং অবাক হয়ে বলল,
“আরে, তুমি এখন এখানে কী করছ? আমি তো বলেছিলাম আজ কিছু করতে হবে না।”
সিমরান কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিল, “আমি আসলে…”
সিমরানের অস্বস্তি দেখে অরণ্যের মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠল।
“আমি ভেবেছিলাম আজ তুমি ক্লান্ত, তাই কিছু করব না। এখন দেখছি, তুমি নিজেই আমার চেয়ে বেশি আগ্রহী!” বলেই সে এক পা এগিয়ে এল, তার মুখে নির্লজ্জ হাসি ঝলমল করছে। “এত করে যখন চাইছ, বেশ, এসো তাহলে। দরজা বন্ধ করো।”
সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
“না… না, আপনি ভুল ভাবছেন। আমি… আমি এখানে এসেছি খালামনির কথা জানতে,” সিমরান কাঁপা কণ্ঠে বলল, তার চোখে ভয় আর অসহায়ত্ব ধরা দিল। “আমি খালামনির সঙ্গে কথা বলতে চাই। তিনি কোথায়?”
অরণ্য হাসল, তার হাসিতে একটা নিষ্ঠুর আনন্দ ফুটে উঠল। “খালামনি?” তা, কী বলবে খালামনিকে?”
“আমি সবকিছু খুলে বলব। মায়ের মুখে শুনেছি, ছোটবেলায় খালামনি আমাকে খুব আদর করতেন। তিনি আমার বিপদের কথা শুনলে নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবেন।”
“তার মানে তুমি ভাবছ, মা এসে তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে?” অরণ্যের কণ্ঠে একটা তাচ্ছিল্য মিশে গেল। “সিমরান, তুমি এখনও কল্পনার জগতে বাস করছ। বাস্তবে ফিরে এসো। চুক্তিপত্রের কথা মনে আছে? তাছাড়া, এটা আমার জগত। এখানে আমার কথাই শেষ কথা। এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”
বলতে বলতে সে আরও কাছে এগিয়ে এল, তার উষ্ণ নিঃশ্বাস সিমরানের মুখে আছড়ে পড়ল। “যাই হোক, আমি আজকে তোমাকে ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যেহেতু নিজেই আমার কাছে চলে এসেছ, তখন আর ফিরিয়ে দিই কী করে? এসো কাছে এসো”
সিমরান পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেল। তার চোখে অশ্রু টলটল করে উঠল।
“আমি… আমি শুধু খালামনির সঙ্গে কথা বলতে এসেছি,” সে কাতর কণ্ঠে বলল। “আপনি এমন কেন করছেন? আমি তো আপনার বোন হই…”
অরণ্যের হাসি যেন আরও গাঢ় হল।
“বোন? হ্যাঁ, তুমি আমার বোন, আমি তো অস্বীকার করছি না কিন্তু তুমি এখানে আমার বোন হয়ে নয়, আমার ব্যক্তিগত সঙ্গী হয়ে এসেছ। আমার শর্ত মেনে এসেছ, তাই এখন আমার শর্ত মেনেই থাকতে হবে। কথা না বাড়িয়ে দরজা বন্ধ করো। নইলে তুমি জানো, আমি কী করতে পারি।”
সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল। তার মন চিৎকার করে তাকে পালাতে বলছিল, কিন্তু অরণ্যের হুমকি তাকে বন্দী করে রাখল। অরণ্য নিজেই উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। সিমরানের চোখ থেকে নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তার মনে হচ্ছিল, তার খালামনির কাছে পৌঁছানোর আশা, তার মুক্তির শেষ সম্ভাবনা, সব যেন অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।
দরজা লক করার ধাতব শব্দ সিমরানের কানে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের মতো বেজে উঠল। ঘরের এক কোণে মোমবাতির ক্ষীণ আলো কাঁপছিল। সিমরান দাঁড়িয়ে ছিল জানালার কাছে, তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফাচ্ছিল—ভয়ে, ক্রোধে, আর এক অদ্ভুত টানে, যা সে নিজেও বুঝতে পারছিল না। অরণ্য ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল, তার উপস্থিতি যেন ঘরের বাতাসকে ভারী করে তুলেছিল। সে সিমরানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, “কেন পালাতে চাইছ, সিমরান? তুমি তো জানো আমি তোমাকে পালাতে দেব না।”
সে ধীরে ধীরে সিমরানের কাছে এগিয়ে এল। সিমরান পিছিয়ে গেল, তার পিঠ জানালার ঠান্ডা কাচের সঙ্গে ঠেকল। মোমবাতির ক্ষীণ আলোতেও অরণ্যের চোখ চিকচিক করে উঠল, তার দৃষ্টিতে মিশে আছে বিপজ্জনক, অথচ মোহনীয় এক আকর্ষন যা থেকে চোখ ফেরানো অসম্ভব। সে সিমরানের এত কাছে এসে দাঁড়াল, যে তার শরীরের উষ্ণতা সিমরানের গায়ে ঝড় তুলল। সিমরান ফিসফিস করে বলল, “আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ। এটা ঠিক নয়। আপনি আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন, এটা অন্যায়!”
“তুমি আমার, সিমরান,” তার কণ্ঠে ছিল এক অলঙ্ঘনীয় দাবি ফুটে উঠল,যেন সে শুধু কথা বলছে না, এক চিরন্তন সত্য ঘোষণা করছে। সে সিমরানের সঙ্গে মিশে দাঁড়াল, তার আঙুল আলতো করে সিমরানের চিবুক ছুঁয়ে দিল। সিমরানের শ্বাস ভারী হয়ে এল। অরণ্যের স্পর্শে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগল, যা সে ঘৃণা করতে চাইলেও পারল না। অরণ্যের হাত তার গাল থেকে ধীরে ধীরে তার ঘাড়ে নেমে এল, অরণ্যের নরম স্পর্শ সিমরানের কলারবোনের ওপর দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে গেল। সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল, তার স্পর্শে মিশে আছে এক তীব্র, হিংস্র অথচ মোহনীয় মাদকতা যা অদ্ভুতভাবে সিমরানকে আকর্ষণ করছে । অরণ্য সিমরানের কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলল,
“সিমরান, তুমি কি জানো, তুমি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলেও তোমার শরীর আমার কাছে হার মানতে চাইছে।”
সিমরান কিছু বলতে চাইল, কিন্তু তার আগেই অরণ্যের ঠোঁট তার ঠোঁটে এসে পড়ল। সিমরান চোখ বন্ধ করে নিল তাদের ঠোঁটের আলিঙ্গন আরও তীব্র হল, সিমরানের শরীর অবশ হয়ে আসছে। অরণ্য যেন তার সমস্ত প্রতিরোধকে এক মুহূর্তে গলিয়ে দিয়েছে।
অরণ্য সিমরানের হাত দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল, তার শক্তি সিমরানের নাজুক শরীরকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল। সিমরান তার শেষ প্রতিবাদ জানাতে তার হাত অরণ্যের বুকে রাখল, তাকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু অরণ্য তাকে আরও কাছে টেনে নিল, ধীরে ধীরে তার হাত ঘাড় থেকে সিমরানের কোমরে নেমে গেল।
সিমরানের ছটফট বন্ধ হয়ে গেল। অরণ্য হঠাৎ সিমরানকে কোলে তুলে নিল। সিমরানের হৃৎপিণ্ড যেন থেমে গেল। দ্রুত পায়ে সে সিমরানকে বিছানার দিকে নিয়ে গেল, তাকে শুইয়ে দিল। সিমরান শক্ত হাতে অরণ্যের শার্ট আঁকড়ে ধরল, তার কণ্ঠে শেষ প্রতিবাদের শব্দ বেরিয়ে আসল, “অরণ্য, থামুন, প্লিজ…” কিন্তু তার শরীর তার কথার বিপরীতে সাড়া দিচ্ছিল। অরণ্যের স্পর্শে এক তীব্র আগুন জ্বলছিল, যা তার সমস্ত দ্বিধাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে।
অরণ্য ধীরে ধীরে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল। মোমবাতির আলোয় তার শক্তিশালী শরীর ঝকঝক করে উঠল। সিমরান তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল, কিন্তু তার নিঃশ্বাস আরও ভারী হয়ে গেল। অরণ্য এবার সিমরানের দিকে হাত বাড়াল। সিমরানের ওড়না সরে গেল। অরণ্যের আঙুলগুলো সিমরানের শরীরের প্রতিটি রেখায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করল। সে ফিসফিস করে বলল, “আজ থেকে তুমি শুধু আমার, সিমরান।”
কথাটা বলেই সে সিমরানের দিকে ঝুঁকে পড়ল। তাদের শরীর একে অপরের সঙ্গে মিশে গেল। তাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল, তা বিলীন হয়ে গেল এক তীব্র বন্য আলিঙ্গনে। সিমরানের প্রতিরোধ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ল, তার শরীর অরণ্যের স্পর্শের কাছে হার মানল। মোমবাতির আলো কাঁপতে কাঁপতে নিভে গেল। ঘর অন্ধকারে ডুবে গেল, তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ আর তীব্র আবেগের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল সারা ঘরে। অরণ্য সিমরানকে নিজের দখলে নিয়ে নিল, সে সিমরানকে এমনভাবে নিজের করে নিয়েছে যেন সে তার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে সিমরানের প্রতিটি কোষে নিজের নাম লিখে দিয়েছে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব তীব্র আলিঙ্গনে রূপ নিল—তারা একে অপরের সঙ্গে মিলে গেল, যে মিলন ছিল বিপজ্জনক, কিন্তু আবেগপ্রবণ।
মুহূর্তটি শেষ হতেই সিমরান যেন বাস্তবতায় ফিরে এল। সে বিছানার এক কোণে গুটিয়ে বসল। তার শরীর কাঁপছে, চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সে নিজেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল, তার কান্নায় অপমান আর অসহায়ত্বের বেদনা মিশে গেল। অরণ্য তার পাশে বসল, তার মুখে সেই নির্লজ্জ হাসি। “কেঁদো না, সিমরান। যা হওয়ার ছিল, হয়ে গেছে। এখন থেকে এটা প্রতিদিন হবে। তাই নিজের মন আর শরীরকে তৈরি করে নাও। আরেকটা কথা,” বলে সে থামল,
অরণ্য হটাৎ নিজের কন্ঠ নরম করে ফেলল আর ধীরে ধীরে বলল,
“আজ তুমি এই ঘরে এসেছিলে, এজন্য নিজেকে দোষারোপ করো না সিমরান। এটা হওয়ারেই ছিল আজ না হলে, কাল আমি ঠিকই আমার পাওনা আদায় করে নিতাম। কেউ আমাকে আটকাতে পারত না,তাই কষ্ট পেওনা। তুমি যে খালামনিকে খুঁজতে এসেছিলে, তিনি আর এই দুনিয়ায় নেই। তাই তুমি চাইলেও তিনি তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারতেন না।”
কথাটা শোনে সিমরানের শ্বাস যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার চোখে ভয়, বিস্ময়, আর এক অব্যক্ত বেদনার মিশ্রণ ফুটে উঠল। অরণ্যের কথাগুলো তার হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধল। তার শেষ আশা, তার খালামনির কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা, এখন চিরতরে মুছে গেছে। সে অশ্রু-ভেজা চোখে অরণ্যের দিকে তাকাল তারপর বলল,
“একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সম্মান নষ্ট করতে আপনার একটুও খারাপ লাগল না? পাঁচ মিনিটের তৃপ্তির জন্য আপনি একটা জীবন নষ্ট করে দিতে পারলেন?আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে আপনার বিবেকে কি একটুও বাঁধল না?”
অরণ্য হাসল, তার হাসিতে কোনো অনুশোচনা নেই।
“সুযোগ? না, সিমরান, আমি কোনো সুযোগ নিইনি। আমি শুধু আমার ইচ্ছা পূরণ করছি। আর আমার ইচ্ছাপূরণে তোমার শরীরের কোনো আপত্তি ছিল না। তোমার শরীর আমাকে আপন করে নিয়েছে। এই সহজ সত্যটা তোমার মনকে মেনে নিতে বলো, তাহলেই দেখবে আর খারাপ লাগছে না।”
বলে সে উঠে দাঁড়াল এবং শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,
“অনেকটা ধকল সহ্য করেছ। এখন একটু বিশ্রাম নাও। তুমি চাইলে এই ঘরে থাকতে পারো, অথবা নিজের ঘরেও ফিরে যেতে পারো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।” বলে অরণ্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। তার পায়ের শব্দ ঘরের নিস্তব্ধতায় মিলিয়ে গেল।
সিমরান চুপচাপ বিছানার কোণে গুটিয়ে বসে রইল, অরণ্যের কথাগুলো তার মনে গভীরভাবে আঘাত করছে।অরণ্য কিছু ভুল বলে নি, সত্যিই সেই মূহুর্তে শরীর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সিমরানের মনের ভেতর একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে—অপমান, অসহায়ত্ব, আর তার হারিয়ে যাওয়া সম্মানের বেদনা। কিন্তু অরণ্যের স্পর্শ এখনো যেন তাকে এক অদৃশ্য শৃঙ্খলে বেধে রেখেছে।