সকালের ভেজা ঠান্ডায় সিমরানের পায়ের ব্যথা যেন তার সমস্ত শরীরে তীব্র যন্ত্রণার মতো ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হচ্ছে,সেই ব্যথা শিরা-উপশিরায় তীক্ষ্ণভাবে আঘাত করছে। তার পা যেন আর তার নিয়ন্ত্রণে নেই। হাঁটাচলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু নিজের শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করে দরজার দিকে এগোতে চাইল সিমরান। কিন্তু পা যেন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল—এক মুহূর্তের অসাবধানতায় ধপাস করে ঠান্ডা, ভেজা মেঝেতে পড়ে গেল। শরীরের প্রতিটি অংশ ব্যথায় কুঁকড়ে গেল। সে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তার শরীর যেন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।
এদিকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে সিমরান ওয়াশরুম থেকে বের না হওয়ায় অরণ্যের ধৈর্য ফুরিয়ে এল। তার কণ্ঠে তীব্র বিরক্তি আর একটা নির্মম ক্রোধ ঝরে পড়ল। সে চেঁচিয়ে বলল,
__“কী ব্যাপার, সিমরান? তোকে আনতে এখন কি আমাকে গাড়ি পাঠাতে হবে? নাকি তুই ভেবেছিস, আমি তোর জন্য সারাদিন বসে অপেক্ষা করব? এই ঢঙ আর কতক্ষণ চলবে?”
সিমরান কোনো জবাব দিল না। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, বুকের ভেতর একটা ভারী পাথর চেপে বসেছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে, কাঁপা পায়ে দরজার দিকে এগোল। তার হাত যখন দরজার হাতলে ঠেকল, সে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। এই দরজা খোলার মাধ্যমে যেন সে নিজেকে আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে—এমন অন্ধকার, যেখানে অরণ্যের নিয়ন্ত্রণের শিকল তাকে শ্বাসরোধ করতে চাইবে। কিন্তু তার আর কোনো পথ খোলা নেই। সে কাঁপা হাতে দরজাটা খুলল।
সঙ্গে সঙ্গে অরণ্য এগিয়ে এল। তার চোখে একটা তীব্র, অপ্রতিরোধ্য দৃষ্টি—যেন সে এক শিকারী, আর সিমরান তার শিকার। কোনো কথা না বলে সে হঠাৎ সিমরানকে টেনে কোলে তুলে নিল। তার শক্ত হাতের বাঁধনে সিমরানের শরীর যেন এক নিমেষে হালকা হয়ে গেল, কিন্তু তার মনের ভয় আর অস্বস্তি আরও গভীর হয়ে উঠল। সে চমকে উঠে, কাঁপা কণ্ঠে চিৎকার করে বলল,
__“কী করছেন? দয়া করে, রাতের মতো কোনো খারাপ কিছু করবেন না! আমাকে নামিয়ে দিন!”
তার কণ্ঠে ভয়, লজ্জা, আর একটা মরিয়া প্রতিবাদ মিশে ছিল। কিন্তু অরণ্য কোনো জবাব দিল না। তার মুখে একটা অদ্ভুত, নিয়ন্ত্রিত নীরবতা। সে সিমরানকে কোলে নিয়ে দ্রুত পায়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
অরণ্য সিমরানকে নিয়ে গিয়ে নিজের বিছানায় আলতো করে বসিয়ে দিল। বিছানার নরম গদিতে সিমরানের শরীর এক মুহূর্তের জন্য স্বস্তি পেল, কিন্তু তার মনের ঝড় থামল না। অরণ্য হঠাৎ তার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। এই অপ্রত্যাশিত আচরণে সিমরানের হৃৎপিণ্ড যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার চোখে বিস্ময়, ভয়, আর একটা অজানা আশঙ্কা জড়িয়ে গেল। সে কাঁপা কণ্ঠে, প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল,
__“কী করছে ভাইয়া, কী হয়েছে? আপনি… আপনি এমন করছেন কেন?”
তার কণ্ঠে ছিল একটা অসহায় প্রশ্ন, যেন সে অরণ্যের এই আচরণের পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে চায়। অরণ্যের মুখের দিকে তাকিয়ে সে দেখল, তার চোখে সেই পরিচিত নিষ্ঠুর হাসি নেই। বরং একটা অদ্ভুত, গভীর দৃষ্টি ফুটে উঠেছে, যেন সে সিমরানের যন্ত্রণাকে পরীক্ষা করছে। অরণ্য অস্বাভাবিক মনোযোগ দিয়ে ধীরে ধীরে সিমরানের সালোয়ারের কিনারা উপরের দিকে তুলতে শুরু করল। তার চোখে এখন হিংস্রতার কোনো চিহ্ন নেই, বরং সে চিন্তিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
__“পায়ে কী হয়েছে, সিমরান?”
সিমরান অরণ্যের হাত থেকে পা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে করে বলল,
__“কিছু হয়নি।
অরণ্য সিমরানের পা আরও শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টেনে নিল। তার কণ্ঠে একটা কঠোরতা ফুটে উঠল।
__”কিভাবে ব্যাথা পেয়েছিস? তুই এত জেদি কেন সিমরান? দেখ তো কী অবস্থা করেছিস! কাল যদি তুই আমার সঙ্গে তর্ক না করতিস, এসব কিছুই হত না। সারারাত নিশ্চয়ই ব্যথার যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছিস?”
কথাগুলো সিমরানের গায়ে ছুরির মতো বিঁধল। তার মনে হল, অরণ্য এই ব্যথার জন্য তাকে দায়ী করছে, যেন এই সব তার নিজের দোষ। তার চোখে অশ্রু জমা হল, কিন্তু সে তা লুকিয়ে রাখল। তার মন চিৎকার করে বলতে চাইল, *“এই ব্যথা আপনি আমাকে দিয়েছেন! আপনি আমাকে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন!”* কিন্তু তার গলা দিয়ে শব্দ বের হল না। সে শুধু মাথা নিচু করে বলল,
__”বল্লাম তো কিছু হয়নি,আমাকে ছেড়ে দিন।”
__“ছেড়ে দেব মানে? তুই কি ভাবছিস, আমি তোর এই লুকোচুরি বুঝি না?”
সিমরানের চোখে ভয় আর অস্বস্তি ঝরে পড়ল। সে কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__“আমার পায়ে কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি। দয়া করে আমাকে এভাবে স্পর্শ করবেন না।”
অরণ্যের চোখে একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফুটে উঠল, কিন্তু তার কণ্ঠে ছিল একটা অদ্ভুত যত্ন।
__“তুই কী মনে করিস, সিমরান, আমি শুধু তোকে ভাঙতে চাই? হয়তো তাই। কিন্তু আমি চাই না তুই এইভাবে ভেঙে পড়িস।
তার আঙুল সিমরানের ত্বকে ছুঁয়ে গেল, যেন সে তার ব্যথার প্রতিটি চিহ্ন পরীক্ষা করছে। সিমরানের শরীর জমে গেল। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফাতে শুরু করল। অরণ্য পায়ের গোড়ালিতে হাত দিয়ে মৃদু চাপ দিতে দিতে নিচু গলায় প্রশ্ন করল,
__“কোথায় ব্যথা করছে,এখানে?”
তার দৃষ্টি সিমরানের মুখের ওপর স্থির রেখে বলল,
__”কী রে, কথা বলছিস না কেন? কী এত লুকোচ্ছিস? বল না, ব্যথা লাগছে কি না।”
সিমরানের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তার মনে হল, অরণ্যের এই আচরণে একটা অদ্ভুত দ্বৈততা আছে—একদিকে সে নিজেই তাকে ব্যথা দিয়েছে, অন্যদিকে তার প্রতিটি স্পর্শ সিমরানকে আরও অসহায় করে তুলছে। সে মাথা নাড়ল,
__“কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।”
অরণ্য এবার বিরক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
__“একদম ছোটবেলার মতোই আছিস! ছোটবেলায়ও ব্যথা পেলে স্বীকার করতিস না, এখনও করছিস না! তুই কি ভাবছিস, আমি অন্ধ? সকাল থেকে তোর পা টেনে টেনে হাঁটার ধরন আমার চোখ এড়ায়নি। ভেবেছিলাম সাধারণ ব্যথা, তাই গুরুত্ব দিইনি। এখন তো দেখছি হাঁটতেই পারছিস না!”
কথা বলতে বলতে অরণ্য বেশ শক্ত হাতে সিমরানের গোড়ালি মোচড়ে ধরল। সিমরান ব্যথায় চিৎকার করে উঠল, তার শরীর সংকুচিত হয়ে গেল। ব্যথার তীব্রতায় তার হুঁশ ছিল না, নিজের অজান্তেই তার হাত অরণ্যের চুল খামচে ধরল। কিন্তু পরক্ষণেই সে বুঝতে পারল কী করেছে। ভয়ে তার হাত কাঁপতে লাগল, সে তাড়াতাড়ি চুল ছেড়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
__“ক্ষমা করে দিন… আমি বুঝতে পারিনি… ব্যথা লাগছিল, তাই হুঁশ ছিল না। আপনি ব্যথা পেয়েছেন, তাই না? কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছা করে করিনি।”
সিমরানের অস্থিরতা দেখে অরণ্য ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার মুখে একটা শান্ত, কিন্তু ভয়ঙ্কর হাসি ফুটে উঠল। সে টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
__“আমি ব্যথা পেয়েছি কি না, সেটা না ভেবে তুই দেখ, তোর পায়ে এখনও ব্যথা লাগছে কি না।”
সিমরান অবাক হয়ে নিজের পায়ের দিকে তাকাল। সত্যিই তো, ব্যথা যেন অনেকটাই কমে গেছে। অরণ্যের মোচড়ানোর পর তার গোড়ালি যেন একটু স্বাভাবিক লাগছে। সে মুখে কিছু না বললেও হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়ল।
অরণ্য তাকিয়ে বলল,
__“তার মানে গোড়ালি মচকে গিয়েছিল। কাল যখন আমি তোকে ফেলে দিয়েছিলাম, তখন ব্যথা পেয়েছিলি, তাই না?”
সিমরান উত্তর দিল না। অরণ্যের এই দ্বৈত আচরণ তার কাছে বোধগম্য হচ্ছিল না—একদিকে সে নিজেই তাকে ব্যথা দিয়েছে, অন্যদিকে তার ব্যথার খোঁজ নিচ্ছে। সে নিচু গলায় বলল,
__“আপনি আমার সঙ্গে এমন কেন করছেন? একদিকে নিজেই ব্যথা দিচ্ছেন, আরেকদিকে আমার ব্যথার খোঁজ নিচ্ছেন। আপনি আমার সঙ্গে এমন খেলা কেন খেলছেন? আমি আপনার কাছে কী? একটা খেলনা?”
অরণ্য টেবিল থেকে একটা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ফিরে এল। সে আবার সিমরানের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসল। তার হাতে একটা মলমের টিউব। সে সিমরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
__“কেন? আমি তোর ব্যথার খোঁজ নিচ্ছি বলে কি তোর অস্বস্তি হচ্ছে? আমি তো আগেও বলেছি, আগামী ছয় মাস তুই আমার, সিমরান। এই ছয় মাসে তোর সমস্ত দায়িত্ব আমার—তোর হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সবকিছুর দায়িত্ব আমার।”
সিমরান অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে তাকাল। তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত মিশ্রণ ছিল—যত্নের আভাস, কিন্তু তার নিচে লুকিয়ে ছিল সেই নির্মম নিয়ন্ত্রণ। সে বলল,
__“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই ছয় মাস তুই যদি আমার কথা মানিস, তাহলে তোর কোনো কষ্ট হবে না। আমি তোকে কোনো কষ্ট দেব না। কিন্তু তুই যদি তোর জেদ চালিয়ে যাস, তাহলে আমি তোর জীবনকে আরও কঠিন করে তুলব।”
সিমরানের মনের ভেতর একটা ঝড় উঠল। সে কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__“আপনি আসলে কী চান?”
অরণ্য একটু থামল, তারপর ধীরে ধীরে বলল,
__“আপাতত চাই তুই চুপ থাক। দেখি, পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছি। যদি ব্যথা না কমে, সন্ধ্যায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। ঠিক আছে?
সিমরান কোন উত্তর দিল না। অরণ্যও সিমরানের দিকে নজর না দিয়ে খুব মনোযোগের সাথে তার আঙুল দিয়ে সিমরানের গোড়ালিতে মলম ঘষতে লাগল। তার শীতল স্পর্শে সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল। অরণ্যের হাত তার ত্বকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, আর সিমরানের মনে হচ্ছে সে শুধু তার ব্যথা নয়, তার সমস্ত অস্তিত্বের ওপর দখল নিচ্ছে। অরণ্য ধীরে ধীরে বলল,
__“সিমরান, আর কখনো তুই আমাকে রাগাবি না। তুই কেন বুঝতে চাইছিস না, আমার কথা মানলে তোর জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে? আর প্রতিবাদ করলে আমি রেগে যাব। তাছাড়া তুই যতই প্রতিবাদ করিস না কেন, শেষ পর্যন্ত আমার কথা মানতে হবে—সেটা তুইও জানিস। তবু কেন এই ত্যাড়ামি করিস?”
সিমরানের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল, কিন্তু সে আর কিছু বলতে পারল না। তার মনের ভেতর একটা তীব্র যন্ত্রণা বয়ে চলেছে—অরণ্যের স্পর্শ, তার কথা, তার নিয়ন্ত্রণ—সবকিছু যেন তাকে একটা অন্ধকার গহ্বরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অরণ্য মলম লাগানো শেষ করে উঠে দাঁড়াল। সে সিমরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
__“দেখ তো, হাঁটতে পারিস কি না?”
সিমরান সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
__“এখন আর ব্যথা লাগছে না। আমি কি এখন যেতে পারি, ভাইয়া?”
অরণ্য হাসল। তার হাসিতে সেই পরিচিত তাচ্ছিল্য ফিরে এসেছে। সে ধীরে ধীরে সিমরানের কাছে এগিয়ে গেল।
__“যেতে চাস? এত তাড়াতাড়ি?” সে একটা চেয়ারে বসে পড়ল, তার দৃষ্টি সিমরানের ওপর স্থির রেখে বলল,
__“তুই কি ভাবছিস, জামা বের করে দিয়েই তোর দায়িত্ব শেষ? না, সিমরান। তুই আরও অনেক কিছু করবি। আমি চাই তুই প্রতিদিন আমাকে অফিসের জন্য পুরোপুরি তৈরি করে দিবি। আজ থেকে এটা তোর দায়িত্ব।”
সিমরানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার হাত কাঁপতে লাগল, কিন্তু সে জানে প্রতিবাদ করলে অরণ্যের রাগ আরও বাড়বে তাই সে নিচু গলায় প্রশ্ন করল,
__“এখন কী করতে হবে তাহলে?”
অরণ্য চেয়ারে বসে ছিল, তার দৃষ্টি সিমরানের ওপর স্থির। তার মুখে সেই পরিচিত তাচ্ছিল্যের হাসি, যেন সে সিমরানের প্রতিটি অস্বস্তি, প্রতিটি কাঁপন উপভোগ করছে। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, তার পায়ের শব্দ ঘরের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিল। সে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল, তারপর সিমরানের বের করে দেওয়া সাদা শার্টটি সিমরানের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
__“এটা পরিয়ে দে।”
সিমরানের হৃৎপিণ্ড যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার চোখ শার্টের দিকে আটকে গেল, সে কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__“মানে? আমি… আমি কেন?”
অরণ্য তার দিকে তাকিয়ে একটা ক্রুর হাসি হাসল।
__“কেন মানে? আমি তো বলেছি, তুই আমার জীবনের প্রতিটি অংশে জড়িয়ে থাকবি। আমার অফিসের জন্য তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু। এখন উঠ। আমার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দে।”
সিমরানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার হাত কাঁপতে লাগল, যেন তার শরীর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। সে বিছানা থেকে ধীরে ধীরে উঠল, তার পা এখনো দুর্বল, কিন্তু অরণ্যের দৃষ্টির তীব্রতা তাকে বাধ্য করল। সে শার্টটা হাতে তুলে নিল, তার আঙুল কাঁপছে, যেন শার্টের ওজন তার কাঁধের চেয়েও ভারী।
অরণ্য তার সামনে এগিয়ে এল, তার শরীর থেকে একটা তীব্র উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ছে। সিমরানের গলা শুকিয়ে গেল, তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফাচ্ছে। অরণ্যের এত কাছে আসায় তার শরীরে একটা অদ্ভুত অস্বস্তি, লজ্জা, আর ভয় মিশে গেল। তার হাত কাঁপতে কাঁপতে শার্টের প্রথম বোতামের দিকে এগোল, কিন্তু তার আঙুল যেন স্থির থাকতে চাইছে না।
__“কী হলো? এত কাঁপছিস কেন?” অরণ্যের কণ্ঠে একটা তাচ্ছিল্য মিশে ছিল, যেন সে সিমরানের এই অসহায়ত্ব উপভোগ করছে। “আমি তো শুধু বোতামগুলো লাগিয়ে দিতে বলেছি নাকি তুই ভাবছিস, আমি তোকে এখনই কিছু করে ফেলব?”
সিমরানের মুখ লাল হয়ে গেল। সে কোনো কথা বলতে পারল না। তার আঙুল শার্টের বোতামে ঠেকল, কিন্তু কাঁপতে কাঁপতে বোতামটা ঠিকমতো লাগানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হল। অরণ্যের গরম নিঃশ্বাস তার কপালে লাগছে, তার উপস্থিতি যেন সিমরানের চারপাশে একটা অদৃশ্য শিকল তৈরি করছে। অরণ্য ধীরে ধীরে বলল
__“দেখ, সিমরান,তুই যতই লজ্জা পাস, যতই ভয় পাস, এই কাজগুলো তোকে প্রতিদিন করতেই হবে তাছাড়া তুই আমার জন্য এসেছিস, তাহলে এই ছোট ছোট কাজগুলো করতে তোর এত সমস্যা কেন?
সিমরানের চোখে অশ্রু জমল, কিন্তু সে তা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করল। তার হাত কাঁপতে কাঁপতে অবশেষে প্রথম বোতামটা লাগাল, কিন্তু তার প্রতিটি স্পর্শে তার শরীর কেঁপে উঠছে। অরণ্যের এত কাছে থাকা, তার দৃষ্টির তীব্রতা, তার নিঃশ্বাস—সবকিছু যেন তাকে অস্বস্তিতে ফেলছে সে ফিসফিসিয়ে বলল,
__“আমি… আমি চেষ্টা করছি। দয়া করে… আমাকে আর এভাবে অপমান করবেন না।”
অরণ্যের ঠোঁটে একটা মৃদু হাসি ফুটল। সে সিমরানের কাছে আরও ঝুঁকে বলল,
__“অপমান? এটা তো অপমান নয়,সিমরান। এটাও এক প্রকার প্রেম, তবে নিষিদ্ধ প্রেম…