Mdigitech

Oronner Chaya Megh Part 7

**সতর্কতা**: গল্পের এই অংশে সংবেদনশীল বিষয়বস্তু রয়েছে, যা গল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এবং পাঠকের অনুরোধ অনুযায়ী সংবেদনশীল ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে।

অরণ্য সিমরানকে একটি দীর্ঘ করিডর দিয়ে নিয়ে গেল, যার শেষে পাশাপাশি দুটি বিলাসবহুল ঘর। ঘরের দরজা খুলতেই সিমরানের চোখে পড়ল ঝকঝকে সাজানো-গোছানো একটি কক্ষ—বড় জানালা, সিল্কের পর্দা, আর নরম গদিওয়ালা বিছানা। কিন্তু এই বিলাসিতা সিমরানের কাছে সোনার খাঁচার মতোই মনে হল। তার হৃৎপিণ্ড ভারী হয়ে এল।

অরণ্য সিমরানকে নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল,
__“আজ থেকে এটা তোমার ঘর। দিনের বেলায় তুমি এখানে থাকবে। আর রাতের বেলায়…” সে একটু থামল, তারপর চোখ সরু করে বলল, “রাতের বেলায় আমার ঘরে, আমার সঙ্গে থাকবে।”

কথাগুলো শুনে সিমরানের গা ঘিনঘিন করে উঠল। অরণ্যের বলা প্রতিটি শব্দ তার হৃৎপিণ্ডে বিষের তীরের মতো বিঁধল। তার চোখে ভয় আর ঘৃণা মিশে গেল। প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করল—বিয়ে ছাড়া এমন নিষিদ্ধ একটা সম্পর্কে জড়াতে আপনার বিবেকে বাধছে না? কিন্তু প্রশ্নটা গলায় এসে আটকে গেল, মুখ দিয়ে বের হল না। গত একদিনে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে অনেক কিছুই বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।

সিমরান চুপ করে কথা গিলে ফেলল, কিছু বলল না। সে জানে, এই সোনার খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পথ তার জন্য খোলা নেই। তার বাবার জীবনের মূল্যে সে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে, কিন্তু এই অপমানের বোঝা সে কতদিন বহন করতে পারবে?

সিমরানের চুপ থাকা দেখে অরণ্য বলল,
__“একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নাও সিমরান দিনের আলোয় এই বাড়িতে তুমি আমার বোন হয়েই থাকবে। আমি চাইনা শোবার ঘরের গল্প চারদেয়ালের বাইরে যাক, সবার কাছে জানাজানি হোক বিশেষ করে বাবার কানে যেন এসব না যায়। বাবা যেন কিছুতেই বুঝতে না পারে আমার সাথে তোমার কি সম্পর্ক।
__” একজন সম্মানীয় ব্যাক্তির সন্তান হয়ে এত নিচে নামতে আপনার লজ্জা লাগছে না।
__”এটা আমার সাম্রাজ্য সিমরান।এখানে আমার কথায় শেষ কথা বলতে পারো আমি সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র শাসক। এখানে আমি যা বলি তাই হয় যাইহোক নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, তাই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আজকের রাতটা সুযোগ দিচ্ছি। কাল থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু হবে। আজ বিশ্রাম নাও কিছু দরকার হলে আমাকে জানিও, পাশের ঘরটাই আমার। আমি এখন যাই, তুমি বিশ্রাম নাও।”
বলেই অরণ্য ঘুরে চলে গেল, তার পায়ের শব্দ করিডরে মিলিয়ে গেল। সিমরান দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। তার হাত কাঁপছে, শরীর অবশ হয়ে আসছে। দরজায় হেলান দিয়ে সে মেঝেতে বসে পড়ল, তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে শুরু করল। সে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে প্রশ্ন করল—কেন? কেন তার সঙ্গে এমন হল? কেন তার জীবন এমন একটা অন্ধকার পথে এসে ঠেকল? তার মাথায় অরণ্যের কথাগুলো ঘুরছিল—“দিনের বেলায় বোন হয়ে আর রাতের বেলায় রক্ষিতা হয়ে থাকবে।”

কথাটা মনে হতেই সে চোখ বন্ধ করে নিল, কিন্তু তার মনের ভেতর অরণ্যের সেই নির্লজ্জ হাসি, তার অপমানজনক কথাগুলো বারবার ফিরে আসছিল। তার মনে হচ্ছিল, সে শুধু এই বাড়িতে বন্দী নয়, তার আত্মা, তার স্বাধীনতা—সবকিছু এই সোনার খাঁচায় চিরতরে আটকে গেছে।

সিমরান বিছানার কাছে গিয়ে বসল, তার হাতে তার ছোট ব্যাগটা শক্ত করে ধরা। সে ব্যাগ থেকে তার বাবার একটা পুরোনো ছবি বের করল। ছবিতে তার বাবার হাসিমুখটা দেখে তার চোখ আরও ভিজে গেল।
__“তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও, বাবা। আমি তোমার জন্য সব সহ্য করে নেব।
🍁
ঘরের বিলাসিতা সিমরানের কাছে বিষের মতো লাগছিল, দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, তার মনে হচ্ছিল, এই অন্ধকার তার জীবনের প্রতিচ্ছবি। সে জানে, এই খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পথ তার জন্য খোলা নেই। কিন্তু তার ভেতরের একটা ক্ষীণ কণ্ঠ তাকে বলছিল—এই অন্ধকারের মধ্যেও হয়তো কোথাও একটা আলোর সম্ভাবনা আছে।
সিমরান তার ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে অন্ধকার শহরের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ তার মনে পড়ল অরণ্যের মা, মানে তার খালামনির কথা। যদি অরণ্যের বাবা এই ঘৃণ্য সম্পর্ক মেনে নিতে না পারেন, তাহলে তার খালামনি নিশ্চয়ই নিজের ছেলের এই নির্লজ্জ আচরণ মেনে নেবেন না। তিনি নিশ্চয়ই সিমরানকে রক্ষা করবেন। ভাবনাটা মাথায় আসতেই তার মনে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা জাগল। হয়তো এটাই তার বাঁচার একমাত্র পথ।

সিমরান মনে মনে ঠিক করল, সে তার খালামনির কাছে যাবে। তাকে সবকিছু খুলে বলবে—চুক্তির কথা, অরণ্যের অমানুষিক আচরণ, তার বাবার জীবন বাঁচানোর জন্য করা আত্মত্যাগ। হয়তো তার খালামনি তাকে এই সোনার খাঁচা থেকে মুক্তি দেবেন। এই ভাবনা তাকে একটা অদ্ভুত সাহস জোগাল। কিন্তু সে জানে না তার খালামনি এখন কোথায়। বিশাল বাড়িতে তার ঘর কোনটা, তাও জানে না। তাই সে ঠিক করল, অরণ্যের কাছেই জানতে হবে।

কাঁপা কাঁপা পায়ে সিমরান নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে অরণ্যের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বিশাল বাড়ির নিস্তব্ধ করিডরে তার পায়ের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। অরণ্যের ঘরের দরজায় পৌঁছে সে কিছুটা দ্বিধা অনুভব করল, কিন্তু তার খালামনির কথা মনে পড়তেই সে দরজায় টোকা দিল। দরজা খুলতেই দেখল অরণ্য তার শার্টের বোতাম খুলছে। সিমরানকে দেখে অরণ্য কিছুটা বিব্রত হয়ে তাড়াতাড়ি শার্ট ঠিক করল আর অবাক হয়ে বলল,
__“কি ব্যাপার তুমি এখন এখানে কী করছ? আমি তো বলেছিলাম আজ কিছু করতে হবে না।”
সিমরান কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিল,
__“আমি আসলে…”
সিমরানের অস্বস্তি দেখে অরণ্যের মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠল।
__“আমি ভেবেছিলাম আজ তুমি ক্লান্ত, তাই কিছু করব না। এখন দেখছি, তুমি নিজেই আমার চেয়ে বেশি আগ্রহী!” বলেই সে এক পা এগিয়ে এল, তার মুখে নির্লজ্জ হাসি ঝলমল করছে।
__“এত করে যখন চাইছ, বেশ, এসো তাহলে। দরজা বন্ধ করো।”
সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
__“না… না, আপনি ভুল ভাবছেন। আমি… আমি এখানে এসেছি খালামনির কথা জানতে,” সিমরান কাঁপা কণ্ঠে বলল, তার চোখে ভয় আর অসহায়ত্ব ধরা দিল।
__“আমি খালামনির সঙ্গে কথা বলতে চাই। তিনি কোথায়?”
অরণ্য হাসল, তার হাসিতে একটা নিষ্ঠুর আনন্দ ফুটে উঠল। “খালামনি?” তা, কী বলবে খালামনিকে?”
__“আমি সবকিছু খুলে বলব। মায়ের মুখে শুনেছি, ছোটবেলায় খালামনি আমাকে খুব আদর করতেন। তিনি আমার বিপদের কথা শুনলে নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবেন।”
__“তার মানে তুমি ভাবছ, মা এসে তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে?” অরণ্যের কণ্ঠে একটা তাচ্ছিল্য মিশে গেল। “সিমরান, তুমি এখনও কল্পনার জগতে বাস করছ। বাস্তবে ফিরে এসো। চুক্তিপত্রের কথা মনে আছে? তাছাড়া, এটা আমার জগত। এখানে আমার কথাই শেষ কথা। এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”
বলতে বলতে সে আরও কাছে এগিয়ে এল, তার উষ্ণ নিঃশ্বাস সিমরানের মুখে আছড়ে পড়ল।
__“আমি আজকে তোমাকে ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যেহেতু নিজেই আমার কাছে চলে এসেছ, তখন আর ফিরিয়ে দিই কী করে? এসো কাছে এসো”
সিমরান পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেল। তার চোখে অশ্রু টলটল করে উঠল।
__“আমি… আমি শুধু খালামনির সঙ্গে কথা বলতে এসেছি,আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
অরণ্য সিমরানের কথায় পাত্তা না দিয়ে তাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে দিল। সিমরান ভয় পেয়ে গেল।
__”আপনি এমন করছেন কেন? আমি তো আপনার বোন হই…”
অরণ্যের হাসি যেন আরও গাঢ় হল।
__“বোন? হ্যাঁ, তুমি আমার বোন, আমি তো অস্বীকার করছি না কিন্তু তুমি এখানে আমার বোন হয়ে নয়, আমার ব্যক্তিগত সঙ্গী,আমার রক্ষিতা হয়ে এসেছ। আমার সব শর্ত মেনে নিয়েছো, তাই এখন আমার শর্ত মেনেই থাকতে হবে। কথা না বাড়িয়ে দরজা বন্ধ করো। নইলে তুমি জানো, আমি কী করতে পারি।”

সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল। তার মন চিৎকার করে তাকে পালাতে বলছিল, কিন্তু অরণ্যের হুমকি তাকে বন্দী করে রাখল। অরণ্য নিজেই উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। সিমরানের চোখ থেকে নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তার মনে হচ্ছিল, তার খালামনির কাছে পৌঁছানোর আশা, তার মুক্তির শেষ সম্ভাবনা, সব যেন অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

দরজা লক করার ধাতব শব্দ সিমরানের কানে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের মতো বেজে উঠল। ঘরের এক কোণে মোমবাতির ক্ষীণ আলো কাঁপছিল। সিমরান দাঁড়িয়ে ছিল জানালার কাছে, তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফাচ্ছে—ভয়ে, ক্রোধে, আর এক অদ্ভুত টানে, যা সে নিজেও বুঝতে পারছে না। অরণ্য ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল, তার উপস্থিতি যেন ঘরের বাতাসকে ভারী করে তুলেছে। সে সিমরানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
__“কেন পালাতে চাইছ, সিমরান? তুমি তো জানো আমি তোমাকে পালাতে দেব না।”

সে ধীরে ধীরে সিমরানের কাছে এগিয়ে এল। সিমরান পিছিয়ে গেল, তার পিঠ জানালার ঠান্ডা কাচের সঙ্গে ঠেকল। মোমবাতির ক্ষীণ আলোতেও অরণ্যের চোখ চিকচিক করে উঠল, তার দৃষ্টিতে মিশে আছে বিপজ্জনক, অথচ মোহনীয় এক আকর্ষন যা থেকে চোখ ফেরানো অসম্ভব। সে সিমরানের এত কাছে এসে দাঁড়াল, যে তার শরীরের উষ্ণতা সিমরানের গায়ে ঝড় তুলল। সিমরান ফিসফিস করে বলল,
__“আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ। এটা ঠিক নয়। আপনি আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন, এটা অন্যায়!”

অরণ্য সিমরানের সঙ্গে মিশে দাঁড়াল, অরণ্যের স্পর্শে সিমরানের গায়ে অদ্ভুত শিহরণ জাগল—একটা ঠান্ডা, অস্বস্তিকর অনুভূতি, যা সিমরান ঘৃণা করতে চাইলেও তার শরীর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল।
অরণ্যের হাত ধীরে ধীরে সিমরানের গাল থেকে নেমে তার ঘাড়ে পৌঁছল। তার আঙুলগুলো সিমরানের কলারবোনের ওপর দিয়ে আলতো করে ঘষে গেল, যেন একটা শিল্পী তার সৃষ্টির রেখা পরীক্ষা করছে। সিমরানের শ্বাস ভারী হয়ে এল। তার শরীর কেঁপে উঠল, অরণ্যের স্পর্শে মিশে ছিল এক তীব্র, হিংস্র, অথচ মোহনীয় মাদকতা। সে নিজেকে বোঝাতে চাইল এটা পাপ,অন্যায়, কিন্তু তার শরীর যেন অরণ্যের স্পর্শের কাছে অদ্ভুতভাবে আকৃষ্ট হচ্ছিল। সে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তার হৃৎপিণ্ড ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারাতে লাগলো।
অরণ্য তার মুখ সিমরানের কানের কাছে নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,
__“সিমরান, তুই কি জানিস, তুই আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলেও তোর শরীর আমার কাছে হার মানতে চাইছে।” তার কণ্ঠে একটা নিষ্ঠুর তৃপ্তি, যেন সে সিমরানের প্রতিটি প্রতিরোধকে ভাঙার আনন্দ উপভোগ করছে।

সিমরানের শরীরে একটা ঝড় উঠল। তার মন চিৎকার করে উঠল, এটা সে চায় না, এসব তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হচ্চ্যে। সে চেঁচিয়ে উঠল,
__“না! আপনি ভুল ভাবছেন! দয়া করে আমার সাথে খারাপ কিছু করবেন না! আমাকে যেতে দিন! আপনি বলেছিলেন আজ..
সিমরান তার কথা শেষ করার সুযোগ পেল না তার আগেই অরণ্যের ঠোঁট তার ঠোঁটে এসে পড়ল। সেই আকস্মিক স্পর্শে সিমরানের শরীর যেন অবশ হয়ে গেল। সে চোখ বন্ধ করে নিল, তার মন প্রতিবাদ করতে চাইল, কিন্তু অরণ্যের ঠোঁটের তীব্র আলিঙ্গন যেন তার সমস্ত প্রতিরোধকে গলিয়ে দিল। অরণ্যের হাত সিমরানের হাত ধরে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল, তার শক্তি সিমরানের নাজুক শরীরকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল। সিমরান শেষবারের মতো প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল। তার হাত অরণ্যের বুকে রেখে তাকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু অরণ্য তাকে আরও কাছে টেনে নিল। তার হাত ধীরে ধীরে সিমরানের ঘাড় থেকে নেমে তার কোমরে পৌঁছল, তার আঙুলগুলো যেন সিমরানের প্রতিটি ইঞ্চি দখল করে নিচ্ছে। সিমরান যখন চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোতে ব্যাস্ত ঠিক তখন হঠাৎ অরণ্য সিমরানকে কোলে তুলে নিল। সিমরানের হৃৎপিণ্ড যেন থেমে গেল। তার শরীর হালকা হয়ে গেল, কিন্তু মন ভারী হয়ে উঠল। অরণ্য দ্রুত পায়ে তাকে বিছানার দিকে নিয়ে গেল, তাকে শুইয়ে দিল। সিমরান শক্ত হাতে অরণ্যের শার্ট আঁকড়ে ধরল, তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তার কণ্ঠে শেষ প্রতিবাদের শব্দ বেরিয়ে এল,

Oronner Chaya Megh Part 1

Oronner Chaya Megh Part 2

Opurno Prem Part 1

Bangla Love Story Collection

__“ভাইয়া, থামুন, প্লিজ… এটা পাপ, খালামণি এসব জানতে পারলে আপনাকে কখনো ক্ষমা করবে না!”
কথাটা শুনে অরণ্যের চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠল। তার মুখে সেই নরম, মোহনীয় ভাব মুহূর্তে মিলিয়ে গেল, তার জায়গায় ফুটে উঠল এক নিষ্ঠুর ক্রোধ। সে সিমরানের চুলের মুঠি ধরে টেনে তাকে বিছানা থেকে তুলে নিজের সর্বোচ্চ শক্তিতে, সিমরানকে দরজার দিকে ছুঁড়ে ফেলল। সিমরান মেঝেতে পড়ে গেল, তার পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করল। অরণ্য রেগে চিৎকার করে উঠল,
__“এখনই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ! আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ আজকেই শেষ! এরপর আর কখনো আমাকে বাধা দিলে তার ফলাফল ভয়ানক হবে। আমি তোকে সাজিয়ে রাখার জন্য নিয়ে আসিনি, আমার চাহিদা মেটানোর জন্য এনেছি, ভুলে যাস না!”
বলেই সে দরজাটা সজোরে বন্ধ করে দিল। দরজার ধাতব শব্দ ঘরে প্রতিধ্বনিত হল।সিমরান মেঝেতে পড়ে রইল, তার পা ব্যথায় মুচড়ে উঠছিল। সে কোনোরকমে উঠে, পা টেনে টেনে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। তার শরীর কাঁপছে, চোখ থেকে অশ্রু অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে। নিজের ঘরে পৌঁছে সে বিছানার এক কোণে গুটিয়ে বসল, সিমরানের মনের ভেতর একটা উত্তাল ঝড় উঠেছে অরণ্যের অস্বাভাবিক আচরণ, তার গায়ে হাত তোলা, তার নিষ্ঠুর কথার ধরন—সব মিলিয়ে তার মনে গভীর আঘাত করছে। তার শরীরে অরণ্যের স্পর্শের শিহরণ এখনও লেগে আছে, কিন্তু সেই শিহরণের সঙ্গে মিশে আছে অপমান, অসহায়ত্ব, আর গভীর ঘৃণা। সে নিজেকে প্রশ্ন করল, “আমার সাথে এমন কেন হল? এরপর কি ঘটতে চলেছে? আমি কিভাবে নিজেকে রক্ষা করব?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কাঁদতে লাগলো সিমরান। কেঁদে কেঁদে একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top