Mdigitech

Opurno Prem Part 6 | Love Thriller Story

গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। ড্রাইভার ফিরে এসে নীরবে গাড়ি চালাতে শুরু করেছে। যেন কিছুই ঘটেনি। অরণ্য জানালার দিকে তাকিয়ে রইল, সিমরান গুটিসুটি মেরে অরন্যের পাশে বসে আছে। ধীরে ধীরে গাড়ির ইঞ্জিনের নিচু গর্জন রাতের নিস্তব্ধতায় মিশে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে গাড়ি এসে থামলো বিশাল ফটকের সামনে। ফটকের ওপারে অরণ্যের প্রাসাদোপম বাড়ি। অরণ্য গাড়ি থেকে নেমে সিমরানের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
“ আমার জগতে তোমাকে স্বাগতম সিমরান।
 অরন্য আলতো করে সিমরানে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনল।সিমরানের শরীর কেঁপে উঠল।কাচের জানালা আর মার্বেলের মেঝে ঝকঝকে আলোয় ঝলমল করছে, কিন্তু সিমরানের মনে হল, সে যেন একটা সোনার খাঁচায় বন্দী হতে চলেছে। অরণ্যের পাশে হাঁটতে হাঁটতে তার পা ভারী হয়ে আসছে। অরণ্য তার পাশেই হাঁটছে,ঠোঁটে লেগে আছে বাঁকা হাসি, যেন সে সিমরানের ভয় ও অসহায়ত্বকে উপভোগ করছে।
হলঘরে পৌঁছতেই সিমরানের চোখ পড়ল ঘরের মাঝখানের বড় সোফায় বসে আছে একজন মধ্য বয়স্ক পুরুষ।হাতে খবরের কাগজ,কপালে গভীর ভাঁজ, চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, আর মুখে একটা কঠিন গাম্ভীর্য। তাকে দেখে সিমরানের চিনতে দেরি হল না, তিনি পরিচিত রাজনীতিবিদ আজাদ চৌধুরী।খবরের কাগজ খুললেই তার ব্যাপারে লিখা চোখে পড়ে। সিমরান লক্ষ্য করল অরণ্যের সঙ্গে তার মুখের কিছুটা মিল আছে। সিমরানের বুঝতে বাকি রইল না এই লোকটি অরণ্যের বাবা, আজাদ চৌধুরী।
অরণ্য সিমরানকে হলঘরের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে বলল,
“বাবা, পরিচিত হও,এই হল সিমরান। আজ থেকে এখানেই থাকবে। ”
আজাদ চৌধুরী খবরের কাগজ থেকে চোখ তুলে অরন্য আর সিমরানের দিকে তাকালেন। তার দৃষ্টি এতটাই তীব্র ছিল যে সিমরানের শরীরে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেল।
অরন্যকে একটা মেয়ের হাত ধরা অবস্থায় দেখে তার চোখে গভীর অসন্তোষ ফুটে উঠল।
 “এই মেয়ে কে, অরণ্য? তুমি ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছ কেন,তাও এত রাতে?”
সিমরানের বুক ধড়াস করে উঠল। তার মনে হল, সে যেন একটা বিচারসভার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। অরণ্যের বাবার কণ্ঠে একটা কঠিন আভিজাত্য ছিল, যা তাকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিল। সিমরান মাথা নিচু করে ফেলল, তার হাত কাঁপছিল।
অরণ্য শান্তভাবে, কিন্তু একটা নিষ্ঠুর হাসির সঙ্গে বলল,
“বাবা, চিন্তা করো না। সিমরান আমার প্রেমিকা নয়। ও একজন পতিতা।
আজাদ চৌধুরী বেশ অবাক হয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,
“তুমি এমন একটা মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছ? আমাদের পরিবারের মান-সম্মানের কথা একবারও ভাবোনি?”
” এখানে মান সম্মানের কি আছে বাবা? আজ থেকে ও কিছুদিন এখানে থাকবে। কাজ শেষ হলে আবার চলে যাবে।”
কথাগুলো শুনে সিমরানের শরীর যেন হিম হয়ে গেল। তার মাথা ঝিমঝিম করে উঠল চোখে অন্ধকার নেমে এল। “পতিতা”—শব্দটা তার মর্যাদা, তার আত্মসম্মানকে যেন এক মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, “আমি খারাপ মেয়ে নই! আমি এখানে আমার বাবার জীবন বাঁচানোর জন্য এসেছি!” কিন্তু তার গলা আটকে গেল। চুক্তিপত্রের কথা, তার বাবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা দুর্বল শরীর—সবকিছু তাকে নীরব করে দিল। সে প্রতিবাদ করতে চেয়েও করতে পারল না, অপমান সহ্য করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু চোখের জল বাঁধা মানল না,চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল।
অরন্যের কথায় আজাদ চৌধুরীর মুখ লাল হয়ে গিয়েছে তার চোখে রাগের আগুন জ্বলে উঠল, তিনি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন,
“কাজ মানে? কিসের কাজ?
অরণ্য নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
“পতিতাদের যে কাজ থাকে, ওর কাজ আমার চাহিদা মেটানো।
অরন্যের কথায় আজাদ চৌধুরী আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। তিনি দ্রুত অরণ্যের কাছে এগিয়ে গেলেন, এবং সোপাটে থাপ্পর বসালেন অরণ্যের গালে তীব্র শব্দে হলঘরের নিস্তব্ধতা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। সিমরান হকচকিয়ে উঠল, তার চোখে ভয় আর বিস্ময় মিশে গেল। তবে অরণ্য স্থির দাঁড়িয়ে রইল, তার গালে লাল দাগ ফুটে উঠেছে, কিন্তু সে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। তার মুখে সেই বাঁকা হাসি অটুট রইল।আজাদ চৌধুরী রেগে বললেন,
“তুমি আমার ছেলে, অরণ্য,” আজাদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। সমাজে তোমার একটা পরিচিতি আছে,সম্মান আছে, এসব কথা মুখে আনতে লজ্জা করছে না তোমার?
অরণ্য ঠান্ডা হাসি হেসে বলল,
 “বাবা, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আমার জীবন আমার মতো চালাব। সিমরান এখানে আমার জন্য এসেছে, কিছুদিন থাকবে তারপর চলে যাবে।এই বাড়ির মান-সম্মানের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”
“অসম্ভব এই বাড়িতে এসব চলবে না। আমি এমন কিছু মেনে নেব না, যা আমাদের পরিবারের নামে কালি লেপে দেয়। তুমি এই মেয়েকে এখনই এখান থেকে বিদায় করো। তোমার যদি এতই সমস্যা হয়ে থাকে আগামীকালই আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করব। তবুও এখানে এসব চলবে না।
” কিন্তু বাবা সমস্যাটা তো অন্য জায়গায় আমি শুধুমাত্র এই একটা মেয়ের সাথেই রাত কাটাতে চাই আর সেটা হল সিমরান!কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে পারব না।
আজাদ সাহেব নিজের রাগ ধরে রাখতে পারছেন না।তিনি উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“যা বলার সরাসরি বলো। এতদিন তো নিজেই বিয়ে করতে চাইতে না আজ হটাৎ কি হল? যাইহোক বিয়ে করার প্রয়োজনবোধ করেছো আমি তাতে খুশি হয়েছি কালকেই তোমার বিয়ে হবে।ঠিক আছে বুঝলাম একজন পতিতাকে বিয়ে করলে সমাজ সেটা মেনে নিবে না,তাই বিয়ে করতে পারবে না। চিন্তা করো না আমি শহরের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিব।
“বাবা তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো না?
আমি আগেও বিয়ে বলেছি আমি বিয়ে করতে চাইনা, এখনো বলছি আমি এখন বিয়ে করবো না।আর হ্যা দুনিয়ায় অনেক মেয়ে আছে, সিমরানের চেয়ে সুন্দরীও আছে কিন্তু আমার শুধুমাত্র সিমরানকেই লাগবে। আর তুমি ভুল ভাবছো ও পতিতা জন্য বিয়ে করতে পারব না ব্যাপারটা এমন নয় বরং ও যদি দুনিয়ার সব চাইতে ভালো মেয়ে হয় অথবা দুনিয়ায় যদি সব মেয়ে শেষ হয়ে যায় একমাত্র ওই অবশিষ্ট থাকে তবু আমি ওকে বিয়ে করব না।
আজাদ সাহেব অধৈর্য গলায় বললেন,
“আমি তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
“আমি বুঝিয়ে বলতে পারবও না বাবা। শুধু এইটুকু জেনে রাখো ওর নাম সিমরান বিনতে কামাল। আমার প্রিয় খালা অপর্না শেখের একমাত্র মেয়ে।
অরণ্যের বলা কথাগুলো শুনে আজাদ চৌধুরী কেমন যেন চুপ হয়ে গেলেন। তার চোখ মুখে সেই রাগ যেন আর নেই তিনি ধীর গলায় বললে,
” অরণ্য তুই…
বাবাকে পুরো কথা শেষ করার সুযোগ দিল না অরন্য তার আগে বলে উঠল
“বাবা, তুমি রাগ করো না। আমি স্পষ্ট করে বলেছি, সিমরান এখানে শুধু কয়েকদিন থাকবে ওর কাজ শেষ হলে চলে যাবে। এতে আমাদের পরিবারের কোনো ক্ষতি হবে না। তোমার যদি এই পরিবেশে থাকতে অস্বস্তি হয় তাহলে তুমি প্লিজ কিছু মাসের জন্য দেশের বাইরে চলে যাও আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি”
বাবাকে কথাগুলো বলে অরণ্য সিমরানের দিকে তাকালো,
 “ভয় পেও না সিমরান। বাবা আগের যুগের মানুষ এসবে অভ্যস্ত না। তবে চিন্তা করো না, এটা আমার জগৎ। এখানে আমি যা বলব, তাই হবে। বাবা আর কিছু বলবে না চলো ভিতরে চলো।
বলতে বলতে অরন্য তাকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। সিমরানের মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে সে অরন্য এবং তার বাবার এমন ব্যবহারের মানে বুঝল না। অরণ্যেরর বাবা শেষ পর্যন্ত কেন এসব মেনে নিলেন তাও বুঝতে পারল না। সে অসহায় চোখে  অরণ্যের দিকে তাকাল তারপর নিচে স্বরে বলল , “আপনি… আপনি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারলেন?আপনি তো ভাল করেই জানেন আমি খারাপ মেয়ে নই আমি এখানে এসেছি আমার বাবার জন্য তবুও আমাকে পতিতা বললেন?
সিমরানের প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই অরণ্য উত্তর দিল,
“টাকার বিনিময়ে যে মেয়ে দেহ বিক্রি করে তাকে পতিতাই বলে মিস সিমরান। দেহের বিনিময়ে টাকা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে ঔষধ  খেলেন নাকি মদ খেলেন তাতে কি যায় আসে?
তুমি যতই কথা বলো, সত্যিটা বদলাবে না।”
অরন্য এমনভাবে কথাগুলো বলল যেন সে এই প্রশ্নের জন্য আগে থেকেই  প্রস্তুত ছিল,অরণ্যের কথাগুলো সিমরানের আত্মসম্মানকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, কিন্তু তার বাবার জীবনের কথা মনে পড়তেই সে নিজেকে সান্তনা দিল। সে জানে, এই অপমান সহ্য করা ছাড়া তার কাছে আর কোনো পথ নেই। তবুও তার মনের গভীরে একটা ক্ষীণ আগুন জ্বলে উঠল—মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল একদিন সে এই শিকল ভাঙবে, এই অপমানের প্রতিশোধ নেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top